গাঢ় সবুজ প্রকৃতি, নীল শুভ্র আকাশের ঠিকানা ছিলো বরিশাল। এসব সৌন্দর্যের কেন্দ্রেই ছিলো ছন্দময় প্রবহমান আঁকাবাঁকা খাল। শহরের বড় আশীর্বাদ সেই খালগুলোই এখন নগরবাসীর ভোগান্তির কারণ। দখল দূষণে অস্তিত্ব হারিয়ে যা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর বেশিরভাগ খাল পরিণত হয়েছে নগরবাসীর বাসা-বাড়ির সুয়ারেজ লাইনের পানি কিংবা ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গায়। দীর্ঘদিন ধরে খননের অভাব আর নাব্য সংকটের পাশাপাশি প্রশস্ততা কমে যা পরিণত হয়েছে নালায়। যাতে সামান্য বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। তবে এসব খালের প্রাণ ফেরাতে এবার খনন শুরু করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। যে উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নগরবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তায় পানি জমে হাঁটাচলা করা যায় না। তবে বর্তমান উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। খাল সংস্কারের উদ্যোগে খুশি এলাকার সবাই।
বরিশাল নগরে বিভিন্ন খালের পাড় সংরক্ষণসহ পুনরুদ্ধার ও পুনঃখননে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। বাস্তবায়নে এরইমধ্যে খাল খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় ৭০১ কোটি টাকা প্রকল্প। যা বাস্তবায়ন হলে নগরীর দৃশ্যপট পাল্টে যাবে বলছেন কর্মকর্তারা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক রায়হান কাওসার বলেন, ‘ধান নদী খাল এ তিনে বরিশাল। যদিও বরিশালকে বলা হয় প্রাচ্যের ভেনিস। যতগুলো খাল আমি পরিষ্কার করেছি সবগুলোর যেখানে ঘনবসতি আছে সেখানে ১০০ মিটার পর এবং যেখানে বসতি কম সেখানে ২৫০ মিটার পর ডাস্টবিন বসানোর কাজ করছি রাস্তার পাশে। মানুষ সেখানে ময়লা ফেলবে।’
কিছুদিন আগেও ময়লা আবর্জনায় যে খালের পানি দেখা ছিল দায় এখন সেই খালে জাল প্রস্তুত করা হয়েছে মাছ ধরার জন্য। খালের পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে হাসের দল। বরিশালের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে খাল খনন ও সংস্কারের বিকল্প নেই. বলছেন পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম।
বরিশাল বিভাগের পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং আমরা মনে করি এ খালগুলোকে যদি আগের মতো প্রবহমান করা যায় তাহলে বরিশালের পরিবেশ একটি ইতিবাচক দিক আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসবে।’
ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলে ১০৮টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও পাকিস্তান আমলে সেই সংখ্যা কমে দাড়ায় ৪৬টিতে। আর ১৯৭১ সালে মেলে ২২ থেকে ২৩টি খালের অস্তিত্ব। যা বর্তমানে ৭টিতে ঠেকেছে।
একসময় বরিশাল নগরীর ভেতর দিয়ে অসংখ্য ছোট বড় খাল বহমান ছিলো। সময়ের পরিবর্তনে এবং দখল দূষণে সেই খালগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কিন্তু এবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এগুলো উদ্ধারে কাজে নেমেছে। এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পাশাপাশি খালগুলো নতুন ভাবে প্রাণ ফিরে পাবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।