মানবপাচারের নতুন রুট নেপাল; ৩৫টি চক্র শনাক্ত!

মানবপাচারের নতুন রুট
মানবপাচারের নতুন রুট | ছবি: এখন টিভি
0

কানাডায় পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে নেয়া হচ্ছে মানবপাচারের তৃতীয় রুট হিসেবে বিবেচিত নেপালে। এমন প্রলোভনে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। ঢাকার অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, ইতালি কিংবা কানাডা যাওয়ার জন্য লিবিয়ার মতো আলজেরিয়া, মঙ্গোলিয়াসহ মানবপাচারের নতুন রুটের খোঁজ পাচ্ছে তারা। শনাক্ত করা হয়েছে অন্তত ৩৫টি চক্র।

উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ নিয়ে যাবার প্রলোভনে অনেকের মতো সিলেটের তিন যুবক গত অক্টোবরে দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে। স্বপ্ন দেখায় কানাডার। সেই হাতছানিতে ঐ তিন যুবককে প্রথমে নেয়া হয় নেপালে। সেখানে পৌঁছার পর ওই চক্র পাসপোর্ট নিয়ে নেয় তাদের। আটকে রেখে দফায় দফায় মারধর ও নির্যাতন চালায়। পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়েও বাধ্য করা হয় তাদের। এখন টেলিভিশনকে নিজেদের এমন অভিজ্ঞতা জানান, সিলেটের এম এ মান্না ও হাফিজুর রহমান।

ভুক্তভোগী জানান, বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর করা হয়। মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে। এত অত্যাচারে দেশে ফেরত আসাটাই অসম্ভব হয়ে ওঠেছিলো তাদের কাছে।

অভিযোগ আছে, প্রথমে বাংলাদেশ থেকে নেপাল, এরপর হংকং হয়ে কানাডা পার করার প্রলোভন দালালদের। ১২ লাখ টাকার চুক্তি। নেপালে গেলে পাসপোর্টে লাগবে কানাডার ভিসা। প্রথমে ৫ লাখ, পরে কাজ করে পরিশোধ করতে হবে বাকি ৭ লাখ টাকা। যেতে না পারলে নেপাল যাওয়ার খরচও ফ্রি। এমন প্রলোভনে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। রুটের গ্রাফিক্স

সম্প্রতি মানবপাচারের তৃতীয় রুট হিসেবে নাম আসে পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির দেশ নেপালের। আগে ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে যেতে হলে নেপালে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিতে হতো বাংলাদেশিদের। একসময় সেসব দেশে নিয়ে যাবার আশ্বাসে দালালচক্র টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও এবার সামনে এলো মানবপাচার ও নির্যাতনের ঘটনা।

বাংলাদেশ নেপাল দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ এস এম সাদেক বলেন, ‘কানাডা নিয়ে যাওয়ার নাম করে যাত্রীদের নেপালে নিয়ে আসা, টাকা আত্মসাৎ, আটকে রাখা ও নির্যাতনের যে অভিযোগ তা আমাদের জানামতে এবারই প্রথম।’

আরও পড়ুন:

ঢাকার অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, ইতালি কিংবা কানাডা; লিবিয়ার মতো আলজেরিয়া, মঙ্গোলিয়াসহ মানবপাচারের নতুন নতুন রুটের খোঁজ পাচ্ছে তারা। সিআইডির সদরদপ্তরে ১৫০টি মামলার তদন্তাধীন। শনাক্ত করা হয়েছে অন্তত ৩৫টি চক্র। আটক করা হয়েছে নেপালে মানবপাচারে জড়িত মিজানুর নামে একজনকে।

সিআইডি সিরিয়াস ক্রাইম-অর্গানাইজড ক্রাইমের এসএসপি মোহাম্মাদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘মানুষ যখন নেপালে যায় তখনই তাদের বুঝা উচিত তারা নেপালে কেন যাচ্ছে। নেপাল রুট হয়ে তো কানাডা যাওয়ার কথা না। যখন কাউকে নেপাল নিয়ে যাওয়া হয় তখনই তার বুঝার কথা তাকে কানাডা নেয়া হচ্ছে না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পুলিশ তদন্তাধীন ও আদালতে বিচারাধীন মানবপাচার মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৩টি। এসব মামলার আসামি ৪২ হাজার ৫৬ জন। গ্রেফতার হয়েছে ১৬ হাজার ৯৩১ জন আসামি। আর গত তিন বছরে বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে ১১ জনের। অন্যান্য মেয়াদে সাজা পেয়েছে আরও ১৪৮ জন। গ্রাফিক্স লাগবে

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্হির্বিশ্বে নেপালের কর্মী চাহিদা থাকার সুযোগ নিচ্ছে দালাল চক্র। ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশিদের নেপালের পাসপোর্ট করে দিয়েও বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। তবে যুব-তরুণদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে এমন ঘটনা বাড়ছে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘নেপালের এটা একটা উইন উইন সিচুয়েশন। নেপালের রিকুডিং এজেন্টসের সাথে বাংলাদেশের যারা দালালরা রিকুডিং এজেন্টস তাদের সাথে একটা কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে উইন উইন সিচুয়েশন। এর মাধ্যমে পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে।’

বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সচেতনতাটা আরও ব্যাপক এবং ওয়ান টু ওয়ান হওয়া দরকার। গ্রাম ভিত্তিক হওয়া দরকার। যাদের মডেল হিসেবে দেখছে তারা যেন সচেতনতা তৈরি করে। যারা ভিকটিম তারা যেন তৈরি করে।’

তরুণদের কর্মসংস্থানের নীতি, সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবাসীদের দিয়ে সচেতনতা ক্যাম্পেইন করা গেলে মানবপাচার ঝুঁকি কমতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইএ