পার্বত্য অঞ্চল: সৌন্দর্য হারিয়েছে অপরাধ-আতঙ্কে

বিভিন্ন নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে পাহাড়ে বাড়ছে অপরাধ
বিভিন্ন নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে পাহাড়ে বাড়ছে অপরাধ | ছবি: এখন টিভি
0

চারদিকে নয়নাভিরাম পাহাড়ের সারি আর সাথে স্রোতস্বিনী চেঙ্গী ও মাইনী নদী খাগড়াছড়িকে পরিণত করেছে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা ভূমিতে। তবে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের মাঝেই রয়েছে পাহাড়ে বিভীষিকার গল্প। বিভিন্ন নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন, গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে উপজাতিদের সংগঠনগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর উত্তোলিত চাঁদার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

চারদিকে নয়নাভিরাম পাহাড়ের সারি। সঙ্গে পাখির কলরব। ঝর্ণা, নদীর স্রোত আর সবুজের সমারোহ। কথাগুলো দেশের অন্যতম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জেলা খাগড়াছড়ির।

পাহাড় আর সমতলে আকাঁবাকা সড়ক। সেই সড়ক আর পাহাড় ছুঁয়ে যায় আকাশের মেঘ। শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত আর বর্ষায় শুভ্র মেঘের খেলাও চলে সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। সাথে স্রোতস্বিনী চেঙ্গী ও মাইনী নদী খাগড়াছড়িকে পরিণত করেছে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমিতে।

প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের মাঝেই রয়েছে পাহাড়ে বিভীষিকার গল্প। বিভিন্ন নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। খুন, গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে উপজাতিদের সংগঠনগুলো। প্রতি বছরই পাহাড়ে চাঁদা আদায়ের ব্যাপকতা বাড়ছে। যাত্রী ও মালবাহী গাড়ি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন উৎস থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর উত্তোলিত চাঁদার পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

২০২৪ সালের হিসাবে পার্বত্য জেলায় উত্তোলিত চাঁদার পরিমাণ মোট ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্য রাঙামাটি জেলায় জেএসএস এর মোট চাঁদার পরিমাণ ১৮৫ কোটি টাকা, ইউপিডিএফের ১৪৮ কোটি টাকা, এমএনপির ০.৭১ কোটি এবং কেএনএফের ০.৯৪ কোটি।

স্থানীয়রা জানান, চাঁদা না দিয়ে কোনো উপায় নেই। প্রাণের তাগিদে চাঁদা দিতে হয় তাদের। কোন অনুষ্ঠান করতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন হুমকি দেয়, গাড়ি আটকে রাখে। বাৎসরিক হিসাবে চাঁদা দিতে হয় বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিন খাগড়াছড়ি ঘুরে দেখা যায়, এ নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি অনেকের। তারপরও বিভিন্নজনের সাথে আলাপে ওঠে আসে চাঁদাবাজির ভয়াবহ চিত্র। চাঁদা না দিলে অপহরণের শিকার হতে হয়। চলতি বছর ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে টমটম গাড়ির চালকসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়েও যাওয়া হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, চলতি জুলাই পর্যন্ত গত এক বছরে ১১৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এর মাঝে উপজাতি ৪১ জন আর বাঙ্গালি ৭৮ জন।

২০২৪ জুলাই থেকে ২০২৫ জুলাই পর্যন্ত সর্বমোট ১১৯ জন অপহরণ হয়েছেন। এর মধ্যে উপজাতি ৪১ জন এবং বাঙালী ৭৮ জন।

খাগড়াছড়ির বাসিন্দারা এসব অপকর্মের জন্য দায়ী করছেন আঞ্চলিক সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে। এখন টিভি কথা বলার চেষ্টা করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমার সঙ্গে।

আরও পড়ুন:

তবে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক সশস্ত্র দুই বাহিনীর সংঘর্ষে আত্মগোপনে যান অংগ্য মারমাসহ অন্যান্য নেতারা। তবে কথা হয় ফোনে। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সংগঠন চালাতে জোর করে নয়, জনগণের কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়।

পার্বত্য জেলায় এক বছরে চাঁদা উত্তোলনের পরিমাণ |ছবি: এখন টিভি

ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর এনসিপির নামেও তো কত কথা শোনা যাচ্ছে যা তারা লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছেন। বিএনপি তো করছেই। আমরা শুধু জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছি সহযোগীতার মাধ্যমে যে যত পারে। এটাকে আপনারা চাঁদাবাজি বলছেন। কিন্তু আমরা এটাকে সহযোগীতা বলছি। এর মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করতে হয়। আমরা জনগনের কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করি।’

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক জানান, সেনাবাহিনী, বিজিবি আর আইনশৃংক্ষলাবাহিনীর সম্মিলিত সহায়তায় চাঁদাবাজি ও অপহরণ বন্ধে কাজ করছে তার প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘সবকিছু হয়তো দৃশ্যমান না। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ আমরা সমন্বিতভাবে এটা নিয়ে কাজ করে থাকি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বাস্তবতার ভিত্তিতে।’

অভিযোগ রয়েছে, আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সেবাদাতা মোবাইল অপারেটরগুলো থেকেও ফি বছর বিপুল অংকের চাঁদা আদায় করে। আর চাঁদা না পেলে ক্ষতিসাধন করা হয় টাওয়ারগুলোতে।

ইএ