তরুণরা জানান, ৩০ থেকে ৪০ টি অ্যাপস এমনিতেই ব্যবহার করতে হয়। আবার চাকরির উদ্দেশে আরও কয়েকটি অ্যাপস ব্যবহার করতে হয়। আবার এক্সট্রা অ্যাপসগুলো ডিলিট করতে হচ্ছে, নতুন অ্যাপস ইনস্টল করতে হয়। এতে করে অনেক সময়ই লগইন করার সময় পাসওয়ার্ড ভুলে যায় তারা। বিটিআরসির তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটিরও বেশি। তারা নানা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে ১৫ থেকে ২০টি অ্যাপস। আর এই সবগুলো অ্যাপস একসাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায় এবং সীমাবদ্ধতায়। এসব কাটিয়ে ওঠার উপায় কী?
সবার আগে চলুন জেনে আসি অন্যরা কি করেছে এই ক্ষেত্রে। উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে সুপার অ্যাপ ব্যবস্থা। যেখানে এক প্ল্যাটফর্মে মিলছে সব ধরনের সেবা পাওয়ার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। যারা উইচ্যাটের মতো নিজস্ব ধারার সোশ্যাল মিডিয়া গড়ে তুলেছে। এছাড়াও আছে সিঙ্গাপুরের সুপার অ্যাপ গ্র্যাব। ইন্দোনেশিয়ার গোজেক থেকে শুরু করে ভারতের পেটিএম এর মতো অ্যাপসগুলো বলে দেয় এশিয়ার দেশগুলো এক্ষেত্রে কতটা এগিয়ে। কিন্তু আমাদের অবস্থান কোথায়?
কিছুটা দেরিতে হলেও গত ২ বছর থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে শুরু করেছে এই সেবা। ব্যাংকিং খাতে প্রথম এই সেবা শুরু করে ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা। আর্থিক সেবার পাশাপাশি বিনোদন, স্বাস্থ্যসহ জীবনযাত্রার সব সেবা মিলছে এই এক অ্যাপেই। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের হেড অফ ডিজিটাল ইনিশিয়েটিভস ফারদিন হাফিজ বলেন, 'তারা সুপার অ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আছে, আছে মিউজিক, ইসলামিক, বুকস পার্টনার ও নিউজ পোর্টাল। গ্রাহকরা খুব সহজে তাদের প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকিং ও নিজস্ব সেবা পাচ্ছে।'
৬ ধরনের সক্ষমতার সাপেক্ষে একটি এপ্লিকেশনকে সুপার অ্যাপ বলা যায়। এই সব সক্ষমতা নিয়ে দেশের প্রথম টেলকো সুপার অ্যাপ বলা হয় মাইবিএলকে। সময়ের সাথে এসব অ্যাপে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও। এ বিষয়ে বাংলালিংকের ডিজিটাল বিজনেস ডিরেক্টর মোহিত কর্পূর বলেন, 'এই অ্যাপসে আপনি টিকিট কাটার বিনিময়ে যে কয়েন পাবেন, সেটি চিকিৎসা সেবায় ব্যবহার করতে পারবেন। অথবা ফোন রিচার্জ করার বিনিময়ে যে কয়েন পাবেন, সেটা দিয়ে শুনতে পারবেন গান। এই পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে গ্রাহক আরো উপকৃত হবেন।'
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অ্যাপসগুলোকে জনপ্রিয় করতে বাড়াতে হবে সময়োপযোগী ফিচার। সে সাথে গুরুত্ব দিতে হবে তথ্যের নিরাপত্তায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, 'পুরো ব্যাংক ডিজিটাল হয়ে গেলে হ্যাকারদের আকর্ষণ এখানে আরো বেড়ে যাবে। তখন আমাদের সাইবার সিকিউরিটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।'
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, 'নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার খুব বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন ওই অ্যাপ্লিকেশনের তথ্য ও তথ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরাপত্তা। সামগ্রিক বিষয়টি ব্যালেন্স করা গেলে এই সুপার অ্যাপ্লিকেশন বাংলাদেশে একটা অর্থবহ অবস্থান তৈরি করতে পারবে।'
ফিউচার মার্কেট ইনসাইটস এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই খাতের বাজার দাঁড়াবে ৮৯ হাজার কোটি ডলারে।