অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ড্রেনের স্বল্পতায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে বগুড়া পৌরসভার বাসিন্দারা। ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ড্রেন রয়েছে মাত্র ৭০০ কিলোমিটার। সেগুলোও ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে একদিনের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সময় লাগছে তিন থেকে চার দিন। বর্ষা মৌসুমের ভারী বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়ে পৌরসভার নারুলী, কৈপাড়া, সেউজগাড়ি, বাদুরতলাসহ বেশ কিছু এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, ময়লা-আবর্জনায় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারেন না তারা। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হলে এ সমস্যা হতো না বলেও জানিয়েছেন তারা। পানিতে ভেসে ময়লা-আবর্জনা সব জায়গায় ছড়িয়ে রোগ জীবাণুও ছড়াচ্ছে বেশি।
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো এই পৌরসভায় ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এই শহরে প্রতিদিন আবর্জনা জমে গড়ে আড়াইশ’ টন। যা অপসারণে কাজ করছে মাত্র সাড়ে তিনশ’ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিজস্ব তিনটি ট্রাক। এ কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ডাস্টবিন থাকলেও ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ময়লা ফেলা হয় সেগুলোতে।
এলাকাবাসী জানান, ডাস্টবিনটা এ জায়গা থেকে সরানো অথবা নিয়মিত পরিষ্কার করার দাবি এখানকার সবার। এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করতে সীমানা বর্ধিত করা হয় ২০০৬ সালে। পরে সে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে বর্ধিত অংশের মানুষ পৌরসভার সীমানায় থাকলেও পায়নি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা। নতুন করে সড়কসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার তো সক্ষমতা নেই, পৌর এলাকার সড়কগুলো সংস্কারই হয় না দীর্ঘদিন। খানাখন্দে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পৌর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট।
অভিযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিয়মিত গাড়ি চলাচল নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তারা। অথচ তাদের দেখার কেউ নেই। শিক্ষার্থী, রোগীদের চলাচলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান তারা।
বৃহত্তম এই পৌরসভায় নেই বাড়তি বরাদ্দ ও জনবল। নাগরিক সুবিধা তাই তলানিতে ঠেকেছে জানিয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন হলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে বগুড়ায়।
বগুড়া পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান রিপন বলেন, ‘পরিবর্তিত অবস্থায় আগামীতে বগুড়া নিশ্চয় বৈষম্যের শিকার হবে না। এবং আমরা সরকারি বরাদ্দ ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প পাবো। এবং বগুড়াকে একটি আধুনিক উন্নয়নশীল শহরে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
এদিকে বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণের কার্যক্রম প্রায় শেষ। গণবিজ্ঞপ্তির প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করতে মাঠ পর্যায়ের সব কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ সেটি পর্যালোচনা করে এরপর নীতিগত অনুমোদন নিয়ে এটি গেজেট প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করলেই হয়ে যাবে সিটি করপোরেশন। লোক স্বল্পতার কারণে তারা সেভাবে সেবাও দিতে পারছে না। তারপর সব জায়গায় ড্রেনও নেই। সিটি করপোরেশন হলে তো বাজেটের সাথে উন্নয়নটা নির্ভরশীল।’
আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় বগুড়া পৌরসভায় নাগরিক সুবিধার এই হাল। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা আর খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট নিয়ে এক দুঃসহ জীবন যাপন করছেন বগুড়া পৌরবাসী। দ্রুত সিটি করপোরেশন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এসব দুর্দশা লাঘব হবার স্বপ্ন দেখছেন তারা।