এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খরচ কেমন, এতে কী কী সুবিধা আছে?

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন হতে পারে?
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন হতে পারে? | ছবি : সংগৃহীত
0

আকস্মিক দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা গুরুতর অসুস্থতার মতো জরুরি মুহূর্তে যখন প্রতিটা মিনিট মূল্যবান, তখন দ্রুত উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছানো অপরিহার্য। বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে, দ্রুত রোগী স্থানান্তর নিশ্চিত করতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air Ambulance Service in Bangladesh) ক্রমেই জরুরি রোগী পরিবহন (Emergency Patient Transport) এর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের দ্রুত স্থানান্তর এবং উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী (What is Air Ambulance) এবং এর ভূমিকা এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।

আরও পড়ুন:

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা (Life-Saving Role)

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হলো মূলত বাণিজ্যিক বিমান ও হেলিকপ্টার পরিষেবা (Commercial Flight and Helicopter Service)। এটি দূরবর্তী অঞ্চল থেকে রোগীকে অতি দ্রুত এবং নিরাপদে চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

সংকটময় সময়ে: বিশেষ করে যখন সড়কপথে অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন দ্রুত রোগী স্থানান্তর (Rapid Patient Transfer) নিশ্চিত করতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা (Air Ambulance Benefits) অনস্বীকার্য।

তাৎক্ষণিক পরিষেবা: এর পরিবহণের খরচ কিছুটা বেশি (Air Ambulance Cost) হলেও, আপদকালীন সময়ে এটি তাৎক্ষণিক পরিষেবা (Instant Service) নিশ্চিত করে।

কি থাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে? |ছবি : সংগৃহীত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যা থাকে বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সুবিধা (Full ICU Facility Inside)

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুধু দ্রুত স্থানান্তরই নয়, বরং আকাশপথে চলন্ত অবস্থাতেও রোগীকে পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সুবিধা (Air Ambulance with ICU Support) দিয়ে জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জীবনরক্ষাকারী এই বিশেষ উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারে থাকে ভেন্টিলেটর (Ventilator), ডিফিব্রিলেটর (Defibrillator), মনিটর এবং ওষুধসহ পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেটআপ (Full ICU Setup)। রোগীর সঙ্গে থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্যারামেডিক টিম (Specialist Medical Team), যারা পুরো যাত্রায় রোগীর অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ (Close Monitoring) করেন।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খরচ কেমন হতে পারে? |ছবি : সংগৃহীত

দূরত্ব ও প্রয়োজনভেদে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রকারভেদ: কখন ব্যবহার হয় ফিক্সড-উইং, কখন রোটারি-ফ্লাইট

মুমূর্ষু রোগী স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air Ambulance) মূলত দুই ধরনের সেবায় বিভক্ত, যা রোগীর অবস্থা, দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা এবং গন্তব্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়। এই দুটি ধরন হলো ফিক্সড-উইং এবং রোটারি-ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স।

১. ফিক্সড-উইং ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স (Fixed-Wing Air Ambulance)

ফিক্সড-উইং এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সাধারণত জেট বা টার্বোপ্রপ বিমানকে (Jet or Turboprop Aircraft) বোঝায়। এই বিমানগুলো উচ্চ গতিতে এবং দীর্ঘ দূরত্বের পথে (Long-Distance/International Route) উড্ডয়নের জন্য উপযুক্ত। আন্তঃশহর বা আন্তর্জাতিক রোগী স্থানান্তর (International Patient Transfer) যখন কয়েকশ বা হাজার কিলোমিটার দূরে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন এটি ব্যবহৃত হয়। এদের কেবিন সাধারণত বড় হয়, যেখানে উন্নত এবং পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেটআপ (Full ICU Setup) স্থাপন করা সম্ভব। দূরপাল্লার ফ্লাইটে রোগীর আরামদায়ক এবং স্থিতিশীল পরিবেশে (Stable Environment) চিকিৎসা প্রদানের জন্য এই ধরনের বিমান অত্যন্ত কার্যকর।

আরও পড়ুন:

২. রোটারি-ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স (Rotary-Flight Ambulance/Helicopter)

রোটারি-ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স হলো হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স (Helicopter Ambulance) যা স্বল্প দূরত্বে দ্রুত স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো দ্রুত উড্ডয়ন ও অবতরণ (Quick Takeoff and Landing) করতে পারে এবং এর জন্য বড় রানওয়ের প্রয়োজন হয় না। হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, খোলা মাঠ বা জরুরি ল্যান্ডিং প্যাড ব্যবহার করে এটি নামতে পারে। প্রত্যন্ত বা দুর্গম এলাকা থেকে রোগীকে উদ্ধার (Rescue from Remote Areas) করে দ্রুত কাছের একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টারই সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। এগুলো মূলত শহর বা দেশের অভ্যন্তরে জরুরি ‘বেড-টু-বেড’ স্থানান্তরের (Bed-to-Bed Transfer) সুবিধা প্রদান করে।

কেন এয়ার-মেডিকেল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবেন? | ছবি: সংগৃহীত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খরচ (Air Ambulance Cost): কেন এই পরিষেবা এত ব্যয়বহুল?

মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরি মুহূর্তে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air Ambulance) পরিষেবা ব্যবহৃত হয়, তা তার প্রিমিয়াম প্রকৃতির কারণে বেশ ব্যয়বহুল (Expensive Service)। স্থানান্তরের দূরত্ব থেকে শুরু করে রোগীর চিকিৎসা সরঞ্জাম—বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে এর চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারিত হয়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক খরচের চিত্র (Domestic and International Price)

বাংলাদেশে হেলিকপ্টার সেবার তথ্যানুযায়ী, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খরচ কত (Air Ambulance Cost in Bangladesh) তার একটি ধারণা পাওয়া যায়:

দেশের ভেতরে: অভ্যন্তরীণ রুটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের ভাড়া ৯০ হাজার টাকা থেকে শুরু (Air Ambulance Price List) করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত (অঞ্চলভেদে) হতে পারে।

দেশের বাইরে: আন্তর্জাতিক রুটে রোগীর স্থানান্তর খরচ (Patient Transfer Cost) কয়েক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হল একটি জরুরি বিমান পরিষেবা। |ছবি : সংগৃহীত

অ্যাম্বুলেন্সের খরচ বৃদ্ধির প্রধান কারণসমূহ (Key Cost Determinants)

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মোট ব্যয় নির্ধারণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

১. স্থানান্তরের দূরত্ব ও রুটের প্রকৃতি: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হলো রোগী কত দূরবর্তী স্থানে যাবেন এবং রুটে ল্যান্ডিংয়ের সুবিধা কেমন।

২. বিমানের প্রকারভেদ: ফিক্সড-উইং (Fixed-Wing) নাকি রোটারি-ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স (Rotary-Flight Ambulance/Helicopter) ব্যবহার করা হচ্ছে—তার ওপর ভাড়া নির্ভর করে।

৩. বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম: রোগীর যদি ভেন্টিলেটর (Ventilator) বা ইসিএমও-এর মতো বিশেষ যন্ত্রপাতির (Special Equipment) প্রয়োজন হয়, তবে খরচ বাড়ে।

আরও পড়ুন:

৪. বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম: পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেটআপ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্যারামেডিক টিমের (Medical Team Cost) উপস্থিতি মোট ব্যয় বৃদ্ধি করে।

৫. লজিস্টিকস খরচ: বিমানবন্দর ব্যবহারের ফি, ল্যান্ডিং চার্জ (Landing Charges), এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচও মোট ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এসব কারণের ভিত্তিতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চূড়ান্ত মূল্য (Final Air Ambulance Price) পরিবর্তিত হয়।

জরুরি অবস্থায় রোগী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। |ছবি : সংগৃহীত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোন কোন দেশে আছে?

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air Ambulance) পরিষেবা এখন আর কেবল উন্নত বিশ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বের বহু দেশেই এটি জরুরি চিকিৎসা সেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সাধারণত, যেসব দেশে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চল রয়েছে, সেসব দেশে এই পরিষেবাটি দ্রুত জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই পরিষেবাটি যে দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, তাদের মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. উত্তর আমেরিকা (North America)

  • যুক্তরাষ্ট্র (USA): এখানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুবিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা দূরবর্তী অঞ্চলেও পরিষেবা নিশ্চিত করে।
  • কানাডা (Canada): বিশাল ভৌগোলিক এলাকা এবং শীতকালে দুর্গম রাস্তার কারণে এখানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (বিশেষ করে হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন :

২. ইউরোপ (Europe)

ইউরোপের অনেক দেশেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা হয় সরকারি অর্থায়নে, অথবা খুব শক্তিশালী বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

  • যুক্তরাজ্য (United Kingdom)
  • জার্মানি (Germany)
  • সুইজারল্যান্ড (Switzerland) (বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য)
  • নরওয়ে (Norway)
  • সুইডেন (Sweden)
  • তুরস্ক (Turkey): ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে অবস্থানের কারণে এটি আন্তর্জাতিক রোগী স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন:

৩. এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (Asia and Pacific)

এই অঞ্চলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং বহু দেশে উন্নত সেবা প্রদানকারী সংস্থা গড়ে উঠেছে।

  • অস্ট্রেলিয়া (Australia): এখানে রয়্যাল ফ্লাইং ডক্টর সার্ভিস (Royal Flying Doctor Service) নামক বিশ্বের প্রাচীনতম এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা রয়েছে, যা বিস্তীর্ণ দুর্গম আউটব্যাক অঞ্চলে সেবা দিয়ে থাকে।
  • ভারত (India): বৃহৎ জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে এখানে পরিষেবা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
  • চীন (China)
  • থাইল্যান্ড (Thailand)
  • সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) (মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)

৪. আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চল (Africa and Other Regions)

আফ্রিকা মহাদেশের কিছু দেশ, বিশেষ করে বৃহৎ এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো এই পরিষেবা প্রদান করে:

  • দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa)
  • মরক্কো (Morocco)
  • নাইজেরিয়া (Nigeria)

সাধারণত বলা যায়, উন্নত বা দ্রুত বিকাশমান স্বাস্থ্য অবকাঠামো এবং বড় বা দুর্গম ভৌগোলিক এলাকাযুক্ত প্রায় সব দেশেই জরুরি প্রয়োজনে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহার (Use of Air Ambulance) বিদ্যমান।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট


এসআর