পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের চলমান উত্তেজনায় আলোচনায় মাধ্যমে সমাধানের পথে হাঁটছে দুই দেশ। ইরান চুক্তিতে সম্মত না হলে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, যেকোনো ধরনের আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাতে টেনে আনবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে তেহরান।
তবে এমন উত্তাপ পরিস্থিতিতেও বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে। ওমানের মধ্যস্থতায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী পরোক্ষ বৈঠকে নিজ নিজ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিনিধিরা। আলাদা কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকের অ্যাজেন্ডা প্রতিনিধিদলের কাছে পৌঁছে দেন ওমানের কর্মকর্তারা। এরপর তেহরান ও মার্কিন প্রতিনিধিরা কয়েক মিনিটের জন্য সাক্ষাৎ করেন।
ওমানের রাজধানী মাস্কটে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা হয়নি বলে জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উভয় পক্ষই একটি কাঙ্ক্ষিত চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনা এগিয়ে নিতে আগ্রহী। আগামী ১৯ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘পরোক্ষ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় চারবার সাক্ষাৎ করেছেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উভয় পক্ষের মতামত একে অপরের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। প্রথম বৈঠকে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অত্যন্ত শান্ত, সম্মানজনক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। কোনো অনুপযুক্ত ভাষা ব্যবহার হয়নি।’
মধ্যস্থতাকারী ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে জানান, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা অর্জনে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য চুক্তি সম্পাদনে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ওমান।
বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে আলোচনা দীর্ঘ করতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, ‘আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে। দুই পক্ষই মধ্যস্থতাকারী ওমানের মাধ্যমে নিজ নিজ মৌলিক অবস্থান তুলে ধরেছে। আমরা আশা করি এই আলোচনা দীর্ঘায়িত হবে না।’
এদিকে, ট্রাম্পের কথার ওপর একবিন্দু ভরসা নেই ইরানের জনগণের। পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো চুক্তিতে আসবে না বলে মত তাদের।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার ইতিহাস অনেক আছে। এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র তার অঙ্গীকার রাখে তাহলে, আমরা একটি সফল আলোচনার আশা করতে পারি।’
আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এ বিষয়ে আমি সন্দিহান। তাদের একগুঁয়েমি স্বভাব এখনো যায়নি।’
পরমাণু ইস্যুতে ইরান তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখবে। তবে উভয়পক্ষই এক ধরনের সময়ের চাপে রয়েছে।