খোদ ইসরাইলিদেরই চক্ষুশূল নেতানিয়াহু

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু | ছবি: সংগৃহীত
0

ইরানের সাথে যুদ্ধে জয় ইসরাইলের-নেতানিয়াহু এমন দাবি করলেও নিজেদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করেন না খোদ ইসরাইলিরাই। জরিপ বলছে, ৫৯ শতাংশ ইসরাইলি চান, গাজায় লড়াই বন্ধ হোক। ৪৯ শতাংশ মানুষের মতে, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল-ই নেতানিয়াহুর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন দিলে ইরানের সাথে ১২ দিনের সংঘর্ষ বুমেরাং হয়ে আঘাত হানবে নেতানিয়াহুর ভোট ব্যাংকে।

গেলো মার্চ মাসে গাজা অস্ত্রবিরতির আলোচনা যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে, তখনই হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। অনেক বিশ্লেষকের মতে, সেটি ছিল ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’।

ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি এগিয়েছিল ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ারও আগে। 

এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় হামাসের অপহৃত এবং ইসরাইলে কারাবন্দী ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাচ্ছিল ধাপে ধাপে। সংঘাতে ক্লান্ত ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি, এমনকি ইসরাইলিরাও যখন মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সমাপ্তির আশা দেখছিল, তখনই থমকে গেলো পুরো শান্তি প্রক্রিয়া।

শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধে ইতি টানার ঠিক আগের স্তর— গাজা থেকে কয়েক দফায় ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার শুরুর ধাপ এলো, তখনই তীব্র হলো গাজায় ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী আগ্রাসন। 

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ ঘোষণা দিলেন, আক্রমণ চলবে হামাস পুরোপুরি নির্মূলের আগ পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ঘোষণা করলেন গাজায় বন্দি ইসরাইলিদের মুক্তির পরের ধাপ। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ ইসরাইলিরা। বিশেষ করে জিম্মি ইসরাইলিদের স্বজনরা। 

অভিযোগ ওঠে, জনতার নিরাপত্তা আর জাতির বৃহত্তর স্বার্থ বাদ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে পুঁজি করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

তেলআবিব ও জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইয়োসি শেইন বলেন, ‘ইসরাইলের জন্য যুদ্ধ জয়ের লড়াই নেতানিয়াহু করছেন না। তিনি লড়ছেন তার জোটের জন্য, ঠিক যেমনটা বহু মানুষ এখন বুঝতে পারছেন। জোট সরকার ধরে রাখাই তার মূল লক্ষ্য, কারণ এখনও তিনি ক্ষমতা।’

এমন পরিস্থিতিতে দিন দিন সমর্থন কমছে ইসরাইলে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। কট্টর ডানপন্থী আর গোঁড়া ধর্মীয় সমর্থক ও মন্ত্রীদের নিয়ে বিচ্ছিন্ন এক সরকার টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। 

৭৫ বছর বয়সী এই নেতা সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেন, আগামী নির্বাচন এবং আরো এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কথা ভাবছেন তিনি। 

মারিভ নামের একটি সংবাদপত্রের জরিপে উঠে এসেছে, ১২০ আসনের পার্লামেন্ট নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো পাবেই না, বরং সরে যেতে পারে জোট সরকারে থাকা ছোট ছোট অনেক দলও। 

ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের নতুন জরিপ বলছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ বা আংশিক আস্থাও নেই ৫০ শতাংশ ইসরাইলির।

অধ্যাপক ইয়োসি শেইন বলেন, ‘৭ই অক্টোবরের ঘটনার সময় তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ইসরাইল রাষ্ট্রকে এই বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। এখন যদি তিনি বাঁচতে চান, তাহলে তাকে তার ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। অন্যথায় তার পতন অবধারিত।’

দুর্নীতির একাধিক মামলাও রয়েছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ঘুষ-প্রতারণাসহ নানা মামলার মধ্যে হাই-প্রোফাইল একটি ফৌজদারি অপরাধ মামলায় আগামী সপ্তাহেই উচ্চ আদালতে হাজিরা দেয়ার কথা তার। 

দেশে জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে শুনানি পেছানোর চেষ্টা করেও সফল হননি তিনি। নেতানিয়াহু আর তার সমর্থকরা এসব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করলেও বিরোধীরা অনড় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে। 

নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে গেলো দু'বছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী আন্দোলনও বটে, যেখানে যোগ দেন লাখ লাখ ইসরাইলি।

এসএইচ