যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সম্পূরক শুল্কের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরও ৮ দেশ। ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, মালদোভা, আলজেরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও শ্রীলঙ্কার ওপর সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক নির্ধারণের পরিমাণ জানিয়ে এসব দেশের কাছে এরইমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
এসব দেশের পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেও উচ্চহারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে হোয়াইট হাউস। দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকরের কথা রয়েছে। এ নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দি সিলাভাকে চিঠি পাঠান ট্রাম্প। সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহে মোট ২১ দেশকে নতুন শুল্কারোপের চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প এক চিঠিতে জানিয়েছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসানোরোর ওপর ব্রাজিলের আচরণের কারণে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে ২০২৩ সালে লুলার ক্ষমতা গ্রহণ ঠেকাতে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। সেই অভিযোগ থেকে বোলসানোরোকে মুক্তির আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।
মার্কিন কমার্স ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ব্রাজিল থেকে মূলত এয়ারক্রাফট, ফুয়েল, মেশিনারিজ, ইলেকট্রিকাল পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ব্রাজিলের এসব খাতে ব্যাপক ধস নামবে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এছাড়াও কপার আমদানির ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (৯ জুলাই) ট্রুথ সোশ্যালে এ কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মেটেরিয়ালের মধ্যে কপার দ্বিতীয়। তাই এই পণ্যে আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র মূলত চীন, জাপান, চিলি, কঙ্গো থেকে সবচেয়ে বেশি কপার আমদানি করে থাকে। তাই কপারের ওপর ওয়াশিংটনের ৫০ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা এসব দেশের কপার শিল্পের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশসহ ১৪ টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে বাংলাদেশের।
বুধবার প্রথম দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে শুল্ক ও বাণিজ্যসহ বেশকিছু ইস্যুতে দুই দেশ একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। আলোচনায় বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে বাংলাদেশ।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১১টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রেন্ডন লিঞ্চ। উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফার বৈঠক হবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। তবে আলোচনার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাই এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে রাজি নয় ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস।
বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যে কার্যকর হবে বর্ধিত শুল্ক।
এদিকে শুল্ক ইস্যুতে এশিয়ার দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।