'জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে আলবানিজ অযোগ্য'

ফ্রান্সেসকা আলবানিজ ও  মার্কো রুবিও
ফ্রান্সেসকা আলবানিজ ও মার্কো রুবিও | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে একদিনে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। তবে, উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে ১০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। নেতানিয়াহু বলছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুব কাছাকাছি আছে ইসরাইল। এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আশাবাদী ট্রাম্প। এদিকে, ইসরাইলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে আলবানিজ অযোগ্য।' এছাড়া, লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় একটি জাহাজ ডুবে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গাজার জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলসহ ইসরাইলের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে উপত্যকার হাসপাতালগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর গাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬ শতাধিক হামলা হয়েছে। উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে আংশিকভাবে চালু আছে মাত্র ১৮টি। তবে সেগুলোতেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী। জ্বালানি সংকটে অন্ধকারে কাটছে রোগীদের জীবন। টর্চ লাইট দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তাররা।

এমন অবস্থায় গাজায় ৬০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলছে তোড়জোড়। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ৬০ দিনের মেয়াদ শেষ হলেও ফের যুদ্ধ শুরু হবে না। সম্ভাব্য অস্থায়ী অস্ত্রবিরতির আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে হামাস অস্ত্রসমর্পণ না করলে ফের যুদ্ধ শুরুর হুমকিও দিয়ে রেখেছে তেল আবিব।

গাজা উপত্যকার যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। তাদের অভিযোগ, ইসরাইলের একগুঁয়েমির কারণে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ, ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহারসহ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তজুড়ে দিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি জানায়, এসব শর্ত পূরণ করলে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পথ প্রশস্ত হবে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে খুব কাছাকাছি আছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী নেতানিয়াহু।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে খুবই আশাবাদী। চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহেই তা কার্যকর হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।’

এদিকে, ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তার বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষী বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতি অবজ্ঞার অভিযোগ এনেছে ওয়াশিংটন।

তবে ফিলিস্তিনিদের হয়ে এখনো লড়াই করে যাচ্ছে লেবাননের হুতি বিদ্রোহীরা। আজ (বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই) সকালে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুতি গোষ্ঠী। যদিও তা প্রতিহত করার দাবি করেছে ইসরাইল।

এছাড়া, লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। এ সময় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ নাবিক। ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও, এখনো নিখোঁজ অন্তত ১৫ জন। যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সেন্টার জানিয়েছে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি হুতিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দরনগরী হোদেইদাহের কাছে ডুবে গেছে।

হামলার দায় স্বীকার করে হুতিরা জানিয়েছে, গ্রিসের মালিকানাধীন জাহাজটি পণ্য নিয়ে ইসরাইলের দিকে যাচ্ছিল। এরপরই জাহাজটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুতি গোষ্ঠী।

এতকিছুর পরও এক মুহূর্তের জন্য গাজায় হামলা বন্ধ রাখেনি ইসরাইলি বাহিনী। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি বাসিন্দাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় তারা লাঠি ও পাথর ছুড়ে আক্রমণ চালায়। যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় মোট প্রাণহানি ছাড়িয়েছে সাড়ে ৫৭ হাজার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, মার্কিন সমর্থিত ইসরাইলের ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সহায়তা নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৭৭০ জন ফিলিস্তিনি।

সেজু