ভারতে বাড়ছে জ্যোতিষী ব্যবসা: অর্ধেকের বেশি অনুসারী তরুণ

ভারতীয় ধর্মগুরু অনিরুদ্ধ আচার্য
ভারতীয় ধর্মগুরু অনিরুদ্ধ আচার্য | ছবি: সংগৃহীত
0

জেন জি'দের কল্যাণে শুধু ধর্ম আর জ্যোতিষশাস্ত্রকে ঘিরে ভারতে গড়ে উঠেছে পাঁচ লাখ কোটি রুপির বাজার। গবেষণা বলছে, ভবিষ্যদ্বাণী, জ্যোতিষশাস্ত্র আর রাশিফলে বিশ্বাস করেন অর্ধেকের বেশি তরুণ ভারতীয়। তাই এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির সাহায্যে ভারতে দিন দিন বাজার বাড়ছে জ্যোতিষীদের।

পেশায় জ্যোতিষী সিদ্ধার্থ এস কুমার। নিজেকে দাবি করেন সাইকিক ও রিলেশনশিপ কোচ বলেও। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত স্যাটেলাইট সিটি গুরুগ্রামভিত্তিক নিউমারোলজি প্রতিষ্ঠান নুম্রো ভানির সাথে কাজ করেন সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে। ছয় বছরের অভিজ্ঞতায় বাস্তব জীবন আর সামাজিক মাধ্যম দু'ক্ষেত্রেই তার প্রতি আস্থা রাখা অনুসারীর তালিকা বিশাল।

মাসে ১শ'র বেশি গ্রাহককে পরামর্শ দেন সিদ্ধার্থ। এদের বেশিরভাগের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। সিদ্ধার্থর সবচেয়ে কমবয়সী অনুসারীটির বয়স মাত্র আট বছর। এনডিটিভি'র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিজীবনে সম্পর্ক থেকে শুরু করে কর্মজীবনে উন্নতি নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা কিংবা অস্তিত্ব সংকট নিয়ে জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হওয়া কিশোর আর তরুণ বয়সীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ভারতে।

বলা হচ্ছে, জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে আটকে থাকা এসব মানুষের গল্পে স্পষ্ট, তরুণ ভারতীয়রা তাদের মনের ভেতরে লুকানো অন্তর্দন্দ্ব আর মানসিক বাধা বোঝার জন্য ঝুঁকছে আধ্যাত্মিকতায়। অনেকটাই বাস্তব জীবনের অসম্ভব ভারী চাপ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে।

নুম্রো ভানির ২০২৪ সালের একটি গবেষণা বলছে, ভারতের ৫১ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী প্রতিদিন জ্যোতিষশাস্ত্রে ঢুঁ মারেন। ৮৮ শতাংশ সপ্তাহে অন্তত একবার রাশিফল পড়েন এবং প্রেমসংক্রান্ত বিষয়ে জ্যোতিষীর ওপর ভরসা ৭৫ শতাংশ তরুণ-তরুণীর।

প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে জ্যোতিষশাস্ত্র মাত্র কয়েক ক্লিক দূরে। অ্যাস্ট্রোলজি অ্যাপ স্ক্রলিং কিংবা ব্যক্তিগত জ্যোতিষীর সাথে বার্তালাপ নানা মাধ্যমে লক্ষণীয় ডিজিটাল জ্যোতিষশাস্ত্রের ঊর্ধ্বগতি। ইনস্টাগ্রামে প্রেমানন্দ গোবিন্দ সরণের অনুসারীর সংখ্যা দুই কোটি ৭৩ লাখ, অনিরুদ্ধচার্য মাহারা ওরফে ‘পুকি বাবা’র অনুসারী ৩৬ লাখ।

আছে অ্যাস্ট্রোটক আর অ্যাস্ট্রোভেদের মতো ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাস্ট্রোশিওর এআইয়ের মতো অ্যাপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যারা দিচ্ছে ব্যক্তিগত রাশিফল আর ম্যাচমেকিং অর্থাৎ বিয়ের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘটকালি ব্যাপক জনপ্রিয় সেবা। এভাবেই ভারতে অনলাইন জ্যোতিষশাস্ত্রের বাজার ১৪ শতাংশ বেড়ে চলতি বছরই ছয় হাজার ২শ' কোটি রুপি ছাড়ানোর পথে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। শুধু ২০২১ সালেই অনলাইনে জ্যোতিষীদের পরামর্শ নেয়ার হার বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

এখানেই শেষ নয়। ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় আয়োজনগুলোতেও উত্থান ঘটছে জেন জি'দের। চলতি বছর ভারতে কুম্ভ মেলায় যোগ দেয় ৪০ কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বী, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ তরুণ। বদলাচ্ছে আধ্যাত্মিক যাত্রার ধরন আর একে ঘিরে অর্থনীতিও। স্রেফ মন্দির দর্শনে শেষ নয়। ভার্চুয়াল পূজা, অনলাইন তীর্থ আর অ্যাস্ট্রোলজি কনসালটেশন সবমিলিয়ে ভারতে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মবাদের বাজার প্রায় পাঁচ লাখ কোটি রুপির, প্রতি বছর যা বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ করে।

ভারতে এ খাতের সঙ্গে জড়িতদের দাবি, দেশটির মিলেনিয়ালস, অর্থাৎ ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মেছেন যারা, তাদের বড় অংশই প্রথা আর ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। কর্মজীবনে উচ্চতা, দিনের বড় সময় জুড়ে কাজে নিজেদের ডুবিয়ে রাখা আর নীরবে মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা সহ্য করাকে কেন্দ্র করে জেনারেশন ওয়াই হিসেবে পরিচিত এই জনগোষ্ঠীর জীবন। যে প্রচলন সগৌরবে নতুন করে লিখছে জেনারেশন জেড বা জেন জি অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ এর শুরুতে জন্ম নিয়েছেন যারা, কিংবা তারও পরের প্রজন্ম।

ইএ