ব্ল্যাক বক্সেই লুকানো থাকে বিমান দুর্ঘটনার মূল সূত্র

বিমানের ব্ল্যাক বক্স
বিমানের ব্ল্যাক বক্স | ছবি: সংগৃহীত
0

যেকোনো বিমান দুর্ঘটনার পর প্রথমেই খোঁজা হয় ব্ল্যাক বক্স। দুটি অংশে বিভক্ত এই ব্ল্যাক বক্সেই রেকর্ড থাকে ফ্লাইটের যাবতীয় তথ্য। দুর্ঘটনাস্থলে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্ল্যাক বক্স উজ্জ্বল কমলা বা লাল রঙের হয়। অত্যন্ত মজবুত ধাতু দিয়ে তৈরি ব্ল্যাক বক্স এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং গভীর সমুদ্রেও অক্ষত থাকে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতে বিমান বিধ্বস্তের পর ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে দুর্ঘটনার কারণ।

প্রতিটি বিমানেই একটি করে ব্ল্যাক বক্স থাকে। বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে অন্যতম সহায়ক এই ব্ল্যাক বক্স। এটি মূলত ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং ডিভাইস। যার মধ্যে ফ্লাইটের সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বিমান উড্ডয়নের পর থেকেই ব্ল্যাক বক্স প্রতি সেকেন্ডে শত শত তথ্য রেকর্ড করে রাখে। যা সাধারণত বিমানের লেজের অংশে স্থাপন করা হয়।

উচ্চ প্রযুক্তির রেকর্ডিং যন্ত্র ব্ল্যাক বক্সে মূলত দুটি অংশ থাকে। একটি ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এবং অন্যটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। যেখানে পাইলটদের কথোপকথন ও বিমানের প্রযুক্তিগত তথ্য রেকর্ড থাকে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করা হয়। ব্ল্যাক বক্সের রঙ সাধারণত উজ্জ্বল কমলা বা লাল রঙের হয়। যাতে দুর্ঘটনাস্থলে সহজে তা খুঁজে পাওয়া যায়।

ব্ল্যাক বক্স অত্যন্ত মজবুত ধাতু দিয়ে তৈরি। এটি এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। এছাড়া, গভীর সমুদ্রের চাপেও অক্ষত থাকে বক্সটি। প্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত লোকেশনের সিগন্যাল পাঠাতে পারে। আধুনিক ব্ল্যাক বক্সগুলোতে ফ্লাইটের ২৫-৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ থাকে।

সাবেক পাইলট এবং বাকিংহ্যামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির লেকচারার মার্কো চ্যান বলেন, ‘প্রতিটি দুর্ঘটনার কারণ জানতে ব্ল্যাক বক্সের সহায়তা প্রয়োজন। বিষয়টি খুব সহজ, কারণ ককপিট, ফ্লাইট কন্ট্রোল এবং ডাটা ইনপুটে কী ঘটেছিল তার সবই রেকর্ড থাকে ব্ল্যাক বক্সে। যা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়। যেকোনো বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান বা তদন্তে ব্ল্যাক বক্স পরিহার্য।’

গেল ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান অন্তত ২৭০ জন। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্স রেকর্ডিং থেকে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, বিমানের উভয় ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডে জ্বালানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণকারী সুইচগুলো বন্ধ ও চালু নিয়ে দুই পাইলটের কথোপকথন রেকর্ড হয়।

যদিও দুর্ঘটনার মূল কারণ সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ব্ল্যাক বক্সের আরও তথ্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

ভারতীয় বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত শাখা প্রাথমিকভাবে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণে দুর্ঘটনার সময় বা দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে আরও ভালো তথ্য দেবে।

এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন বলেন, ‘সবাই দুর্ঘটনার আসল কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তারা তথ্যের জন্য অপেক্ষায় আছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য সবার সামনে তুলে ধরা হবে।’

গেল ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ১৭৯ জন আরোহী। ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পাখির আঘাতকে দায়ী করা হয়েছিল। সম্প্রতি ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণের পর দেখা যায়, পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনটি বন্ধ না করে সচল ইঞ্জিনটি বন্ধ করে দেন পাইলট। এতেই অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।

বিমানে উন্নত ধরনের ব্ল্যাক বক্সের প্রচলন হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ব্ল্যাক বক্স আকাশপথের যেকোনো বিপর্যয়ের সত্য উদঘাটনের অন্যতম চাবিকাঠি। দুর্ঘটনায় বিমান ভেঙে টুকরো টুকরো বা আগুনে পুড়ে গেলেও টিকে থাকে ব্ল্যাক বক্স।

এসএস