চরম আবহাওয়ায় বাড়ছে কঙ্গো-সুদানে কলেরা সংক্রমণ

কঙ্গোতে বাড়ছে কলেরা সংক্রমণ
কঙ্গোতে বাড়ছে কলেরা সংক্রমণ | ছবি: সংগৃহীত
0

চলতি বছর কঙ্গোতে কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু সাত শতাধিক। চরম আবহাওয়া, দুর্বল স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেশটিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা। দক্ষিণ কিভু প্রদেশের স্বর্ণ খনির শ্রমিকদের মধ্যে প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি। এদিকে সুদানে কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। দেশটির ১৮টি রাজ্যের ১৩টিতেই কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এরইমধ্যে দেশটির বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়ছে কলেরার প্রাদুর্ভাব।

গেল সাত মাসের দেশটিতে কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু সাত শতাধিক মানুষের। রাজধানী কিনশাসাসহ উত্তর-পূর্ব প্রদেশও ছড়িয়ে পড়েছে কলেরার প্রাদুর্ভাব। চরম আবহাওয়া, দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বাস্তুচ্যুতি সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা আঞ্চলিক বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ‘কলেরা মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হাত ধোয়া ও স্যানিটেশনের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

সম্প্রতি কলেরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে শহরজুড়ে। প্রতি সপ্তাহে শতাধিক কলেরা রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। দেশটির ২৬টি প্রদেশের ১৭টিতে ব্যাপক আকারে প্রাদুর্ভাব ঘটেছে কলেরার। বেশ কয়েক বছর ধরে অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে লড়াই করছে দেশটি।

কঙ্গোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জার কাম্বা বলেন, ‘কঙ্গোতে বর্তমানে দুটি মহামারী বিরাজ করছে। একটি এমপক্স এবং অন্যটি কলেরা। গেল ২৭ সপ্তাহ ধরে কলেরা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন শহরে তা ছড়িয়ে পড়ছে।’

এদিকে কঙ্গোর দক্ষিণাঞ্চলের কিভু প্রদেশের স্বর্ণ খনিতে কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবাকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এরইমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ছয় শতাধিক। যাদের বেশিরভাগই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং দূষিত পানির জন্য খনি শ্রমিকরা কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কিভু প্রদেশেই আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতেও খনিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা।

তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘গুরুতর অবস্থায় আমাকে হাসপাতালে আনা হয়। এরপর এখানে পরীক্ষার পর কলেরা ধরা পড়ে।’

অন্য একজন বলেন, ‘ডায়রিয়া ও বমি হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য এখানে আসি। দুইদিনে আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। হাসপাতালে না আসলে মারা যেতাম।’

এদিকে আফ্রিকার আরেক দেশ সুদানেও কলেরার বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক হারে। যা দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশটিতে চলমান সংঘাতে বেশিরভাগ অঞ্চলে বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র। এতে ব্যাহত হচ্ছে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

দেশটিতে কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গেল এক বছরে সুদানে ১৮টি রাজ্যের মধ্যে নতুন করে ১৩টিতে ছড়িয়ে পড়েছে কলেরা। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে এক হাজার ৮০০ এর বেশি মানুষ। বেশিরভাগ রাজ্যে সুপেয় পানির অভাবে ভুগছে বাসিন্দারা। নদীর দূষিত পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে তারা।

খার্তুম রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফাতহ আল-রহমান মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘কলেরা নিয়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের ফলে বেড়েছে। সংঘাতে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অনেক মানুষের জীবন ও সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। চিকিৎসা সুবিধা, সরঞ্জাম এবং সরবরাহও পদ্ধতিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধ গুরুতর মহামারী নিয়ে এসেছে।’

গেল ১০ জুন খার্তুম রাজ্যে মহামারী নিয়ন্ত্রণে কলেরা টিকাদান অভিযান শুরু হয়েছে। যার আওতায় রাজ্যের প্রায় ২৬ লাখ মানুষকে কলেরা টিকা দেয়া হচ্ছে।

এসএস