গাজায় জাতিগত নিধনের শঙ্কা, চলছে লুটও

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা | ছবি: সংগৃহীত
0

দুর্ভিক্ষের শঙ্কা আর গণহারে সাধারণ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর মধ্যেই গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরাইল। শনিবারও (২৪ মে) আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক ফিলিস্তিনি। খাবারের প্রয়োজন আর সংকট এতো চরমে পৌঁছেছে যে, ত্রাণের বহরে লুটের ঘটনাও ঘটছে। ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের উপরও হামলা করছে আইডিএফ। বিশ্লেষকরা বলছেন, অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়টের নামে গাজায় জাতিগত নিধন আর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। যা যুদ্ধাপরাধের সামিল।

অপারেশন গিডিয়নশ চ্যারিয়ট, নতুন নামে নতুন উদ্যমে গাজায় আগ্রাসন। অভিযান চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রস্তুতি নিচ্ছে আইডিএফ সদস্য আর সাঁজোয়া যান। হামাস নির্মূলের নামে দিনে রাতে যখন তখন উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজা, শরণার্থী শিবির এমনকি অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার জাবালিয়া আল বালাদ এলাকায় একটি ভবনে বিমান হামলা চালিয়ে পুরো ভবন গুড়িয়ে দেয় আইডিএফ। ধারণা করা হচ্ছে, সেই হামলায় অর্ধ শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে।

এরমধ্যেই উপত্যকায় স্বল্প পরিমাণে প্রবেশ করছে ত্রাণ সহায়তা। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বলছে, গমসহ অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ করা হচ্ছে, গাজার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। কিন্তু ১১ সপ্তাহের ব্লকেডের সংকট এতো কম ত্রাণে পূরণ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। সীমান্তে দাঁড়িয়ে অনেক ট্রাক, এপারে খাবারের অপেক্ষায় মানুষ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মানুষের পরিস্থিতি এতো করুণ যে, ট্রাক প্রবেশ করলে ত্রাণ চুরি হওয়ার শঙ্কাও আছে।

ইসরাইলি গণমাধ্যমের অভিযোগ, উপত্যকার দেইর আল বালাহ আর নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের মতো এলাকায় ত্রাণের পণ্য লুট করে সেগুলো গাজার সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ১৫টি ত্রাণবোঝাই ট্রাক চুরি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, খাবারের অভাব আর দুর্ভিক্ষে সুস্থ বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের পর থেকে গাজায় ক্ষুধায় অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, এখন গাজায় আগ্রাসনের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ধাপ চলছে। কারণ পুরো উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ প্রবেশ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু খাবার নয়, আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসাসেবা, পুষ্টিহীন শিশুদের বিশেষ যত্ন, এসবই প্রয়োজন এখন গাজায়। গাজায় আন্তর্জাতিক সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ইসরাইল আগ্রাসন চালাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়।

রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম এন্ড পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ডিন ল্যাং বলেন, ‘কয়েকটা, একডজন এমনকি শত শত ট্রাক পাঠিয়ে মাত্র কয়েকদিনের জন্য গাজার মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। অন্ততত ৫০০ থেকে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রয়োজন গাজায়। পাশাপাশি উপত্যকায় এগুলো সমানভাবে বণ্টন করাও প্রয়োজন। অনেক সময় খাবারের ট্রাকে লুটপাট হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন গাজার সাধারণ মানুষের কি অবস্থা। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালীন নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পরিকল্পনা আসলে অসম্ভব।’

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন বলছে, যেই ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করছে উপত্যকায়, তা দিয়ে এক শতাংশেরও কম মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। এই গণহত্যাকে নতুন নাম দিয়ে এবার গাজার বাকি বেসামরিক অবকাঠামো শেষ করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল।

এসএস