লেবাননে ব্যাংকিং খাতে আস্থা নেই; মানি ট্রান্সফার কোম্পানির দিকে ঝুঁকছে নাগরিকরা

লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংক | ছবি: সংগৃহীত
0

দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা নেই লেবাননের নাগরিকদের। তারা ঝুঁকছেন মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলোর দিকে। ২০১৯ সালে আর্থিক খাতে ধস নামার পর সঞ্চয় হারায় লাখ লাখ গ্রাহক। নিরাপত্তার শঙ্কায় বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা অ্যাপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সুস্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও আস্থা ফিরছে না গ্রাহকদের।

২০১৯ সাল থেকে লেবাননে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দার শুরু। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। তারল্য সংকটে পড়ে দেশটি প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংক। এরপরই জনগণের সঞ্চয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে লেবানন সরকার। এতে আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়ে লাখ লাখ গ্রাহক।

সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাংক ডাকাতি সংকটকে আরও গভীর করে তুলে। নিরাপত্তার শঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বেশকিছু ব্যাংক। ধীরে ধীরে ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা নাই হয়ে যায়।

বিকল্প উপায় হিসেবে লেবাননের জনগণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মানি ট্রান্সফার পরিষেবার ওপর। বেশকিছু কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহার করে তারা লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। পানি বা বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির কেনাকাটা সবই এসব সংস্থার মাধ্যমে করে থাকে।

লেবাননের একজন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমার জীবনে একটি শোকবার্তা হয়ে উঠেছে। ব্যাংক আমার সব অর্থ কেড়ে নিয়েছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমার কেনানো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নেই। আমি কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই অর্থ রাখতে চাই না। কারণ এসব ব্যাংকের ওপর বিশ্বাস নেই।’

গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকায় এসব মানি ট্রান্সফার সংস্থাগুলো ব্যাংকের মতো কার্ড সিস্টেম চালু করেছে। ধীরে ধীরে সব ধরনের সেবার চালু করার পরিকল্পনা করছে সংস্থাগুলো।

ওমট ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন শাখার প্রধান মার্সেল মুয়াওয়াদের বলেন, ‘ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে পেতে আরও ৫০ বছর সময় লাগবে। যতক্ষণ না পরিবর্তন আসবে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবর্তনের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।’

৫০ লাখ বাসিন্দাদের সেবায় নিয়োজিত মাত্র কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। অর্থনৈতিক পতনে পেনশনের অর্থও তুলতে পারছে না অবসর নেয়া লেবানিজরা। অনেকে ব্যাংকে রাখা আমানতও ফেরত পাচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন লেবাননে এই মুহূর্তে একটি সুস্থ ব্যাংকিং খাতের কোনও বিকল্প নেই। ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

ইনফরমেশন ইন্টারন্যাশনালের নীতি বিশ্লেষক মোহাম্মদ চামসেদ্দীন বলেন, ‘মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলো যেসব পরিষেবা প্রদান করে তা ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে না। কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমানত গ্রহণ এবং তার উপর সুদ এবং ঋণ দেয়া। সঞ্চয়ের সুরক্ষার ক্ষেত্রে মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।’

লেবানন সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক ব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরও আর্থিক খাতে বিশ্বাস ফিরছে না গ্রাহকদের। ব্যাংকের চেয়ে মানি ট্রান্সফারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বহু গ্রাহক।

এসএস