গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস ও ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার ও মিশর। ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্ত ছিল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ফেরত দেবে হামাস। এই সময়ের মধ্যেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে দুই পক্ষ।
তবে যুদ্ধবিরতির শর্তে হামাস সংশোধনী দেয়ার পরই ভেস্তে যায় সবকিছু। মূলত যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষের দাবি নিয়ে আটকে যায় আলোচনা। হামাসের দাবি, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হলেই, সব জিম্মিদের মুক্তি দেয়া দেবে। অন্যদিকে, ইসরাইল বলছে, হামাসকে গাজার শাসনক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং তাদের নিরস্ত্র না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। এদিকে, হামাস ক্ষমতা ছাড়লেও, অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি না।
এরপরই বেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। মধ্যপ্রাচের বিশেষ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে হামাসের কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি বলেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরও স্বার্থপরের মত আচরণ করছে হামাস। এরপরই মার্কিন প্রতিনিধিদের কাতার থেকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন স্টিভ উইটকফ। তবে গাজার যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র এখনই হাল ছাড়ছে না বলেও জানান তিনি।
হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প পথ ব্যবহার করতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন উইটকফ। তবে বিকল্প পথ কী হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও পরবর্তী পদক্ষেপ ভয়াবহ হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
এদিকে ইসরাইলও তাদের প্রতিনিধিদের দোহা থেকে ফিরিয়ে এনেছে। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, হামাসের নতুন প্রস্তাব সম্পর্কে আরও পরামর্শের জন্য প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। হামাসের অভিযোগ, ইসরাইলিদের বাধার কারণেই যুদ্ধবিরতি হচ্ছে না। আর উইটকফের মন্তব্যকে দুঃখজন বলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।
এদিকে ফিলিস্তনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
ফ্রান্সের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তবে ফরাসি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া বলে অভিহিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। টুইটারের এক পোস্টে রুবিও বলেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া মানে হামাসকে উৎসাহিত করা।
তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তকে অপমান ও লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইউরোপের বৃহত্তম ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ফ্রান্স।