দেশে দেশে ঐতিহ্যবাহী শরবতের যত রকমফের

0

"শরবত" শব্দটি এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে। যার অর্থ বরফের পানীয়। ভারতে শরবতের প্রচলন শুরু হয় ১৭ শতকে। মুঘলরা সেখানে প্রচলন করেছিলেন। সম্রাট বাবরের শাসনামলেই ভারতে শরবত বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কথিত আছে, সে সময় হিমালয় থেকে বরফ ব্যবহার করে বরফযুক্ত শরবত তৈরি করা হতো।

কালের পরিক্রমায় খাবারের আয়োজনে এই পানীয় অত্যন্ত জনপ্রিয় আইটেম হয়ে উঠেছে। তা অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও। বর্তমানে ইফতারের বিশেষ পছন্দের অনুসঙ্গও ধরা হয় শরবতকে।

মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শরবতের গ্লাসে চুমুক চাঙ্গা করে দেয় শরীর-মন। যদিও পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি শরবত পান করে থাকেন। তবে গরম আবহাওয়ায় এক গ্লাস ঠাণ্ডা, স্বাস্থ্যকর পানীয় আপনার শুকনো জিভকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে।

এছাড়া রোজা রেখে দীর্ঘক্ষণ পানিশূন্য থাকায়, নিজেকে সতেজ করতে এবং শীতল করতে শরবতের কোন বিকল্প নেই। দেশভেদে ইফতারিতে বাহারি শরবত পান করে থাকেন রোজাদাররা।  

১. তেঁতুলের শরবত

|undefined

ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্কে তেঁতুলের শরবত ঈদ উৎসবসহ পবিত্র রমজান মাস জুড়ে প্রস্তুত করা হয়। তেঁতুলের শরবত সেখানে ‘দেমিরহিন্দি সার্বেতি’ নামে পরিচিত। অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক এই শরবতটি বরফকুচি, লবঙ্গ, এলাচ, তাজা আদা, দারুচিনির, মধু, বার্ধক্যরোধক একধরনের পাতা এবং শুকনো লিন্ডেন ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়। উর্দুতে, তেঁতুল ‘ইমলি’ নামে পরিচিত। পাকিস্তানে সাধারণত আলু বোখারা সাথে যুক্ত করে পান করা হয়। 

২. বাদাম শরবত

|undefined

সুপ্রাচীনকাল থেকেই পারস্যে বাদামের শরবতের প্রচলন চলে আসছে। ক্লাসিক এই শরবতটি এলাচ এবং কেওড়ার মতো হালকা সুগন্ধি মশলাসহ বাদাম দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া এই শরবতটি দুধ, জাফরান এবং তরমুজের বীজ দিয়েও তৈরি করা হয়। বর্তমানে রোযা ছাড়াও বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে এই শরবত তৈরি করা হয়।

 

৩. লেবু ও চেরি শরবত

|undefined

ইরানী রন্ধনশৈলীতে বিভিন্ন ধরণের শরবত প্রস্তুত করা হয়। তবে পবিত্র রমজান মাসে দুটি সর্বাধিক জনপ্রিয় শরবত হল লেবু এবং চেরি শরবত। এই শরবতের সতেজ প্রভাব রয়েছে তৃষ্ণা মেটাযনোর সাথে সাথে শরীরকেও প্রাণবন্ত করে তোলে। গরম আবহাওয়ায় শরীরকে শান্ত ও ঠাণ্ডা রাখতে এবং দীর্ঘসময় পানিশূন্যতা দূর করতে এই শরবতের জুড়ি নেই। 

৪. গোলাপের শরবত

|undefined

ক্লাসিক স্বাদের গোলাপের শরবতের এই ধারণা এসেছে ভারত থেকে। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ ভারতে এই পানীয়টি প্রথম তৈরি করেছিলেন হাকিম হাফিজ আব্দুল মজিদ। পরবর্তীতে এই পানীয়টি পুরনো দিল্লিতে প্রসার লাভ করে। এই পানীয়টি ‘মহব্বত কা শরবত’ নামেও পরিচিত। গোলাপের পাঁপড়ি জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে ঘন সিরাপ তৈরি করে তাতে পানি কিংবা দুধ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। তবে গোলাপের শরবত অটোমানরা পিষে পানির সাথে মিশিয়ে পান করতো।

 ৫. জাল্লাব - সংযুক্ত আরব আমিরাত

|undefined

জল্লাব হল একটি সাধারণ গ্রীষ্মকালীন পানীয়। যা শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে জনপ্রিয়। পানীয়টি রমজান মাসের প্রধান খাবার এবং প্রতিটি বাড়িতে প্রস্তুত করা হয়। খেজুরের পেস্ট, আঙ্গুরের গুড়, গোলাপজল, বরফ ও ভেজানো বাদাম মিশিয়ে জাল্লাব তৈরি করা হয়। পানীয়টি কেবল শরীরকে হাইড্রেট এবং শক্তি জোগায় না বরং এটি পুষ্টি গুণেও অতুলনীয়।