ফুলের উপমা কেবলই ফুল তবু না চাইতেও হাজার অবহেলায় যে নিভৃতে ভালোবেসে যায় তার তুলনা তো দেয়া যায়ই কেবল সদ্য ফোটা ফুলেরই সঙ্গে। এই যেমন কাঠফাটা রোদে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাওয়া নগরীতেও যেনো বৈশাখের দিনগুলোতে হাসি দিয়ে পথিকের দিকেই তাকিয়ে আছে গ্রীষ্মের ফুলেরা। গুমোট গ্রীষ্মের আবহাওয়ায় যখন জ্বলে যায় পথিকের শরীর তখন আবার এই আগুনঝরা গ্রীষ্মই প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে যায় তার ফুলের সমারোহে।
চারপাশের সব রুক্ষতা যেন হারিয়ে যায় এই হরেক রঙের ঝাঁপির মাঝে। সোনাঝরা সোনালু যখন হলদে আভায় মিলিয়ে দেয় চারিপাশ, কুরচি তখন মুচকি হেসে স্নিগ্ধ করে দেয় পরিবেশ।তাই তো কবি লিখেছিলেন, ‘কুরচি তোমার লাগি পদ্মেরে ভুলেছে অন্যমনা, যে ভ্রমর, শুনি নাকি তারে কবি করেছে ভর্ৎসনা।’
কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় যেনো ছেয়ে গেছে আকাশ, জারুলের বেগুনিতেও যেনো তখন ঠিক সেই আভাস। কবি জীবনানন্দ বলেছিলেন, ‘ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ–দুপুর চিল— একা নদীটির পাশে/ জারুল গাছের ডালে ব'সে ব'সে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।’
মধুমঞ্জরী লতা, বাগান বিলাস, মাধবী, রাধাচূড়া, কনকচূড়া, কাঠগোলাপ, কদম, করবী-কি নেই আমার শহরে? ইট কাঠের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছে সকলে মিলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক, ক্রিসেন্ট লেক, বলধা গার্ডেন হাতিরঝিল এলাকায় এই পুষ্পবৃক্ষেরা দাঁড়িয়ে আছে অক্সিজেনের অভাবে মৃতপ্রায় এই নগরীর ফুসফুস হয়েই।
প্রখর রোদ কি কালবৈশাখী ঝড় তারা এই ঋতুর অতিথি। অতিথির সঙ্গে পথিকের মেলবন্ধন শুধুই মুহূর্তকে ফ্রেম বন্দী করে রাখবার নয় যেনো পুরোটা মুহূর্তই নিজের করে উপভোগ করবার।