ঢাকার রিকশায় আসছে লিথিয়াম ব্যাটারি, দ্রুত ন্যায্য রূপান্তরের উদ্যোগ

বক্তব্য রাখছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ
বক্তব্য রাখছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ | ছবি: সংগৃহীত
0

ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহন রূপান্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আজ (সোমবার, ২৮ এপ্রিল) গুলশানের নগর ভবনে ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক এক নীতিনির্ধারণী সংলাপে এ ঘোষণা দেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ইয়ুথ নেট গ্লোবাল এবং আরও ৩৫টি নাগরিক সংগঠন যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

জাস্ট ট্রানজিশনের ওপর গুরুত্বারোপ করে ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত রিকশায় বাধ্যতামূলকভাবে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব চার্জিং স্টেশনে ১০ লক্ষ নতুন চাকরির সুযোগ ঘটবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নতুন বৈজ্ঞানিক নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেখানে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ঢাকার সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কাঠামো, নিরাপত্তা এবং অনুমোদন কোনো কিছুই মানসম্মত নয়। অধিক বিদ্যুৎ খরচ হওয়া এবং ব্যবহৃত ব্যাটারির কারণে এগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংলাপে পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী, পরিকল্পনাবিদ ও গবেষকরা অংশ নেন। বিশেষজ্ঞরা মত দেন, নতুন বৈজ্ঞানিক নকশার রিকশায় সোলার প্যানেল যুক্ত করা গেলে শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা কমবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। তবে এর পাশাপাশি সচেতন ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরি এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপরও গুরুত্ব দেন তারা।

গবেষণা তথ্য তুলে ধরে সংলাপে জানানো হয়, দেশে ব্যবহৃত প্রায় ৮৬ শতাংশ লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি অনানুষ্ঠানিকভাবে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত হয়, যা সীসা দূষণের বড় উৎস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অনানুষ্ঠানিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বন্ধ না হলে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা একটি অপরিকল্পিত নগরী। এখানে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’

পলিসি ডায়লগের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিবেশ এখন চরম সংকটে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত কর্মক্ষমতা সূচক ২০২৪ অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৫তম। এই সংকট থেকে উত্তরণের অন্যতম পথ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিপুল সম্ভাবনা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।’ এ জন্য সেক্টর ভিত্তিক পরিকল্পনা ও ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

এএইচ