২০২৩ সালে গ্রামের দালালদের মিথ্যা আশ্বাসে প্রলুব্ধ হয়ে সাগর ও তানজির পরিবার থেকে চার লাখ টাকা দিয়ে পাড়ি জমান লিবিয়ার উদ্দেশে। প্রতিশ্রুতি ছিল ভালো কোম্পানিতে কাজের। বাস্তবে কোনো কাজের ব্যবস্থা ছিল না। এরপর তাদের ইতালিতে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে পাচারকারীরা বিক্রি করে দেয় এক ভয়ঙ্কর মাফিয়া চক্রের হাতে।
৮০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে তাদেরও অন্ধকার একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। শুরু হয় নির্মম ও পৈশাচিক নির্যাতন লোহার রড, লাঠি, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে তাদের উপর চালানো হয় দিনের পর দিন অবর্ণনীয় নিপীড়ন। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলে নির্যাতনকারীরা ধরে নেয় তারা আর বাঁচবে না, ফেলে রেখে চলে যায়। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল। এই দুই তরুণ আশ্রয় নেন ত্রিপোলির এক আত্মীয়ের বাসায়।
ব্র্যাকের কাছে পরিবারের আবেদন এবং মানবিক সহানুভূতির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (টিআইপি) অফিস এই ঘটনার প্রতি সংবেদনশীলভাবে সাড়া দেয়। তাদের নেতৃত্ব ও তদারকিতে আইওএম হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে লিবিয়ায় আইওএমের সহায়তায় এই দুই তরুণকে উদ্ধার করে দেয়া হয় সেইফ হোমে আশ্রয়।
সব জটিলতা ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তারা ফিরেছেন বাংলাদেশে। এটি শুধু দুটি মানুষের ফিরে আসা নয়, বরং এটি এক জীবন্ত প্রমাণ যে, আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা, মানবিক নেতৃত্ব এবং পরিবার ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একটি জীবন বা ভবিষ্যৎকেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
অনেক প্রতীক্ষার পর এই দুই তরুণের ফিরে আসা পরিবার, রাষ্ট্র এবং আমাদের সামষ্টিক মানবিক দায়িত্ববোধের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।