২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মাধ্যমে অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের।
এর তিন দিনের মাথায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যেই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক। রাষ্ট্রযন্ত্রকে নতুন করে সাজিয়ে সোনার বাংলা উপহার দেবেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের এক বছর পর এবার সময় এসেছে সেই হিসাব কষার। গত ১২ মাসে জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে ইউনূস সরকার।
আন্দোলনে নিহতদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি ছিল এ সরকারের কাছে অন্যতম প্রত্যাশা, যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের সদস্যসহ মানবাধিকার কর্মীদের।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চারা যে লক্ষ্যে জীবন দিলো; সেভাবে দেশ গড়ার বা দেশের সেরকম পরিবর্তন, দুর্নীতিমুক্ত, যেখানে কোনো গুম-খুন থাকবে না, টেন্ডারবাজি থাকবে না, এরকম একটা সুন্দর বাংলাদেশ তারা চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা আমরা মনে হয় হারিয়ে ফেলতে চলেছি।’
জুলাই আন্দোলনে নিহত ফাইয়াজের খালা নাজিয়া খান বলেন, ‘আমার শুধু একটাই আশা যে, আল্লাহ যেন আমাকে ওই খুনিকে দেখে যাওয়ার সুযোগ দেন।’
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এ মামলাগুলোকে সরকার এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার দেয়ার দরকার ছিল। এটি যদি মোটামুটি সময়কে বিবেচনায় নিয়ে করা হত, তাহলে ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে আমরা চার্জশিট দাখিল করতে দেখতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।’
গত এক বছরেও জনগণের আবেগ বুঝতে পারেনি সরকার। সাধারণের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে থেকে এলিট শ্রেণির সঙ্গে আলোচনা করেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেন সরকার— এমনটাই মনে করছেন আরেক বিশ্লেষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান বলেন, ‘সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কোনো মেলবন্ধন নেই সরকারের। মূলত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেই তারা বেশি আলোচনা করেন। এলিটদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ জনগণের মতামত নেই বললেই চলে।’
জুলাই আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা এ সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও। আল-জাজিরা, রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের দৃশ্যমান সংস্কারের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে তাদের স্বার্থের দিকেই বেশি মনোযোগী হতে হয়েছে ইউনূস সরকারকে— এমনটাই বলা হয়েছে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে।
এছাড়াও দেশব্যাপী এখনও মব ভায়োলেন্সের নামে অস্থিরতা চলছে, যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা দেখাতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন। এসব ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিও আস্থা কমেছে জনগণের।
অধ্যাপক আসিফ এম শাহান বলেন, ‘রাজনীতির খুবই নোংরা খেলা চলছে। কোনো পরিবর্তনই আমার চোখে পড়ছে না। আরও হতাশা বাড়ছে দিন দিন।’
এই বিশ্লেষকের মতে, একটি হতাশার অধ্যায়ের পর আরেকটি হতাশার অধ্যায় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।