ভুল অব‍্যাহত রাখলে অনিবার্য ওয়ান ইলাভেনের দিকে যাবে দেশ: এবি পার্টি

এবি পার্টির সংবাদ সম্মেলন
এবি পার্টির সংবাদ সম্মেলন | ছবি: সংগৃহীত
0

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে এবং বিভেদ ও অনৈক্যজনিত ভুল অব‍্যাহত রাখলে দেশ অনিবার্য ‘ওয়ান ইলাভেনের’ দিকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। আজ (মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট) জুলাই অভ‍্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘পদধ্বনি নয় আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ২০০৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দেশ যেদিকে হেঁটেছিল এখন আমরা সবাই মিলে সেদিকেই রওনা হয়েছি।’ 

এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন‍্য হয় সংখ‍্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, না হয় গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনের সমাধান প্রস্তাব করেন তিনি।

অনুপ্রেরণা, আত্মপর্যালোচনা ও প্রত‍্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে জুলাই অভ‍্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আজ সকালে বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবি পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান বক্তব‍্য রাখেন। 

সংবাদ সম্মেলনে ধন‍্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। 

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জীবন বিলিয়ে দেয়া মহান শহিদদের। কৃতজ্ঞতা ও বিনীত সালাম জানাই হাজার হাজার আহত-পঙ্গু ভাই-বোনদের। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে অংশ নেয়া সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি রইলো আন্তরিক শ্রদ্ধা।’ 

তিনি বলেন, ‘আজ গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দল হিসেবে এবি পার্টি খুব বড় দল নয়, কিন্তু আমাদের স্পষ্ট মনে আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৪ জুলাই দলীয় ব্যানারে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে আমরা এ আন্দোলনকে সাপোর্ট করেছি। বড় দলগুলো এখন নানা বক্তব্য দিচ্ছে। তখন তারা কেউ সরাসরি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সাপোর্ট করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ আন্দোলনে এবি পার্টি সামনে থেকেও নেতৃত্ব দেয়নি, পেছন থেকেও অনুঘটকের কাজ করেনি। আমরা যা করেছি, আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে আন্দোলনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেছি। গণঅভ্যুত্থানে অবদান ও এর অংশীদারিত্ব নিয়ে যে বিতর্ক তা সমাধান না হলে জুলাই আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদী বিভক্তির জন্ম দিবে।’ 

জুলাই ঘোষণাপত্র যেন অলংকারিক দলিল না হয়, সে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর প্রতিটি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’ 

তিনি এক উপদেষ্টার ওয়ান ইলাভেনের পদধ্বনির বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘তিনিতো পদধ্বনি শুনছেন, কিন্তু আমরা ওয়ান ইলাভেন চাক্ষুষ দেখছি। আপনারা যেভাবে রাজনৈতিক বিভেদে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে ওয়ান ইলাভেন সরাসরি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন কিন্তু বাস্তবতা হলো হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো পুরো দেশে গেড়ে বসে আছে। আমরা যদি এই রাজনৈতিক বিভেদ দূর করতে না পারি, জনগণের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে না পারি, তাহলে আজ যারা আন্দোলনের প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন তারা কেউ জনগণের হাত থেকে মুক্তি পাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাব দিয়েছিলাম যেন আগামী পাঁচ বছর সবদল মিলে একটি ঐকমতের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ গঠন করে, সেজন‍্য পিআরের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো বিভক্তি মূলক বক্তব্য না দিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান সব রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিভক্তির মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা যাবে না। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে রাজনৈতিক বিভেদ দূর করে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠনে আমাদের কাজ করতে হবে।’ 

এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর এখন আবার আমরা ফ্যাসিবাদের বয়ান, দিল্লির বয়ান শুনতে পাচ্ছি।’ 

রাজনৈতিক বিভক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সবাইকে একমত হতে হবে।’ 

ফুয়াদ আরও বলেন, ‘সরকার আজ জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবেন। আমরা সেখানে যাবো। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহনকারী অনেকেই এ অনুষ্ঠান বর্জন করছে। এই ধরনের অনুষ্ঠান গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের বর্জন করা খুবই দুঃখজনক। সরকারের উচিত ছিল সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

এ সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।—প্রেস বিজ্ঞপ্তি

এসএইচ