নাহিদ ইসলাম লেখেন, একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা; সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যেখানে মুজিববাদ একাত্তরের ভারতের বর্ণনায় বসিয়ে দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেছিল, সেখানে ২০২৪ পুনরুদ্ধার করেছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম; যার প্রেরণা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও সমঅধিকারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার আশা।
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের পর জন্ম নিয়েছে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নতুন প্রজন্ম, যারা চব্বিশের লড়াইয়ে অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা একাত্তর থেকে অতিক্রম করে এসে পৌঁছেছি চব্বিশে। যারা এখনো একাত্তরের পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তারা দেশকে আবার পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোয় টেনে নিতে চায়।’

নাহিদ ইসলামের মতে, চাওয়া ছিল চব্বিশ থেকে নতুন সূচনা; যেখানে অভ্যুত্থানের জন্ম দেওয়া মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষার ওপর নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। মুজিববাদসহ সকল প্রকার কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করাই দায়িত্ব, রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক করার জন্য।
তিনি আরও লেখেন, এ প্রজন্ম ইতোমধ্যেই একাত্তরকে অতিক্রম করেছে। কেউ আর ‘প্রো-একাত্তর’ বা ‘অ্যান্টি-একাত্তর’ দ্বৈততার ওপর দাঁড়ানো রাজনীতি মেনে নিতে রাজি নয়। একাত্তর ইতিহাসে থাকবে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে, সম্মান করার নীতি হিসেবে; কিন্তু রাজনৈতিক বৈধতার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে আর নয়। সাতচল্লিশেও একইভাবে ইতিহাসে থাকবে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হবে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হবে না।
তার মতে, এর মানে এই নয় যে এসব ঘটনা নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। বরং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসে ঐতিহাসিক প্রশ্নগুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে। বলেন, ‘এখন রাজনীতি হতে হবে চব্বিশের মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে। যারা আবার একাত্তরে ফিরতে চায়, তারা চব্বিশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে।’
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান বহু রাজনৈতিক শক্তির জন্য ছিল এক ধরনের প্রায়শ্চিত্ত, তাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেই প্রায়শ্চিত্ত অর্থহীন হয়ে পড়বে যদি আবার পুরোনো মতাদর্শিক রাজনীতিতে ফিরে যাওয়া হয়। দায়িত্ব হলো পুরোনো দ্বৈততার রাজনীতি ফেরত আসা রোধ করা।’
নাহিদ ইসলাম লেখেন, মনে রাখতে হবে, চব্বিশ কখনো প্রতিশোধের জন্য ছিল না। যারা এটিকে প্রতিশোধের হাতিয়ার বানাতে চাইছে, তারা এর মর্মার্থই বুঝতে পারেনি। চব্বিশ হলো জাতীয় ঐক্য ও পুনর্মিলনের ক্ষেত্র। এর চেতনা ভবিষ্যৎ গড়ায়, যা গড়ে উঠবে ঐকমত্য, সহমর্মিতা ও সম্মিলিত দায়িত্ববোধের মাধ্যমে; প্রতিশোধের চক্রে আবদ্ধ হয়ে নয়।’