সারিবদ্ধ পিলারগুলো ঢাকার যানের চাকার গতিকে রুদ্ধ করে রাখারই যেন প্রতিচ্ছবি। মগবাজার থেকে মালিবাগের দিকে রেললাইনের উপর প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ অংশের কাজ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে প্রকল্পে অর্থছাড় আটকে দেয় ঋণ সহায়তা দেয়া চীনের এক্সিম ব্যাংক। সিঙ্গাপুরের আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হলেও অর্থছাড়ের জট দ্রুত খুলবে এমন নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না কেউ।
ঢাকার যানজট কমানোর পাশাপাশি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো যেন দিনের বেলায়ও ঢাকার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাধাহীনভাবে যেতে পারে সেই পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।
বিমানবন্দরের সামনে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে দ্বিতীয় এক্সপ্রেসওয়ে। এই অংশের জমি অধিগ্রহণে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তবে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আব্দুল্লাহপুরের অংশের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে মূল রাস্তার ঢালাইয়ের কাজ।
একই সাথে সমানতালে এগিয়ে চলছে আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর পর্যন্ত অংশের কাজ। এই এলাকায় তুরাগ নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ভেঙে ফেলা হবে যানচলাচলের রাস্তা। এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশের উড়াল সার্ভিস সড়ক দিয়ে চলবে স্থানীয় যানবাহন। সেজন্য মূল এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের আগে সার্ভিস সড়কটি খুলে দেয়া হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই। উড়াল সড়কে উঠানামার র্যাম্পগুলোরও কাজ প্রায় শেষের দিকে।
প্রকল্প পরিচালকের আশা, আগামী বর্ষার আগেই বাইপাইল থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নিচের একপাশের সড়ক পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে যান চলাচলের জন্য। এতে এই এলাকার জনদুর্ভোগ কমবে। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত ওভারহেড উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে সাইট দিয়ে ওভারহেড লাইন করবো, সে জায়গা নেই। হাই ভোল্টেজ লাইন জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমার লেবার, ইঞ্জিনিয়াররা যখন কাজ করবে সেটাও একটা হুমকি। সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দপ্তরে কাজ হচ্ছে। উনি ওইটা দিলে তখন আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা শুরু করতে পারবো। আমার এই প্রজেক্টের আগে যে গতি ছিল, বর্তমান সরকারের সময়ে গতি আরও বেড়ে গেছে। ৫৯ শতাংশ ওভারঅল প্রগ্রেস, আর ফিজিক্যাল প্রগ্রেস হলো ৫২ শতাংশ।’
তবে সব সংকট কাটিয়ে জোড়েসোরে চলছে বাইপাইল থেকে ইপিজেড পর্যন্ত কাজ। উপরের বড় অংশের ঢালাইয়ের কাজও শেষের দিকে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৪৪ কিলোমিটার পুরো এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজে বড় বাধা সমন্বয়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘একটা অংশের কাজ চলমান আছে, ঢাকা-আশুলিয়া যেটা কিন্তু অন্য অংশটা, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ সম্পন্ন হয়ে বাকি অংশ বন্ধ হয়ে আছে। যদি সমন্বিত হয়ে দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রাখা না যায় তাহলে দেখা যাবে আমাদের যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা, যানজন কমানোর, সেটা ব্যাহত হতে পারে। শুধু তাই না, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে যে অংশটুকু রয়েছে তার জন্য চ্যালেঞ্জ কিন্তু অনেক। কারণ এখানে ইউটিলি লাইন সরাতে হবে, তারপর এটা চলে যাবে কিন্তু দক্ষিণ সিটিরি মতো একটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ভেতর দিয়ে।’
১৭ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের সংশোধিত প্রকল্পে বাড়ানো হচ্ছে অর্থ বরাদ্দ। ডলারের দাম আর নির্মাণ ব্যয় বাড়ায় হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়। ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ।