ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে ঋণ কেলেঙ্কারির শীর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক জনতা। বিসমিল্লাহ, বেক্সিমকো, এস আলমসহ শীর্ষ ৯টি ব্যবসায়ীক গ্রুপের কাছে আটকে আছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। প্রভাবশালী এসব গ্রুপের কাছে জিম্মি জনতা ব্যাংকের ঋণের প্রায় ৬৬ শতাংশই খেলাপি। সব মিলিয়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের রেকর্ড ৬৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপ ঋণ জালিয়াতি করে জনতা ব্যাংকের শুধু দিলকুশা শাখা থেকে তুলে নেয় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। নাসা গ্রুপের ১২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেক্সিমকো নামে দেখাতে বাধ্য করা হয় জনতা ব্যাংকে। বর্তমানে বেকেক্সিমকোর দায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি, যার পুরোটাই খেলাপি।
বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে হাতিয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির তিনটি শাখা থেকেই নেয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণের বড় একটি অংশ পাচার হয়েছে।
আরেক প্রভাবশালী এস আলম গ্রুপের কাছে জনতা ব্যাংকের ঋণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ঝুঁকিতে বিপুল অঙ্কের ঋণ রয়েছে।
গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও ২০১২ সালে জনতা ব্যাংক সেই ঋণ কিনে ফের নতুন ঋণ দেয়। বর্তমানে এই গ্রুপের মোট খেলাপি ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও রানাকা রতনপুর ও সিকদার গ্রুপের খেলাপি টাকা ফেরার সম্ভাবনা নেই। ব্যাংকটির এমডি জানালেন, চর দখলের মত এমন ব্যাংক দখলের চিত্র বিরল। তবে এসব ঋণ আদায়ে কঠোর হচ্ছেন তারা।
জনতা ব্যাংক পিএলসির এমডি মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘কোনো কোনো গ্রাহক তো এমডির বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে কেন আমরা দীর্ঘদিন ধরে এলসিট পেমেন্টগুলো দিচ্ছি না। এ মুহূর্তে খেলাপি আদায়ের কোনো বিকল্প নেই জনতা ব্যাংকের। অনেকগুলো বড় বড় ঋণ, সেগুলো তাৎক্ষণিক আদায় করা একটু সময়ের বিষয়, লম্বা প্রসেসের বিষয়। সেই প্রসেস থেকে আমরা পিছিয়ে নেই।’
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। চরম আস্থার সংকটেও পড়তে হয় তাদের। আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন ১০০টি উপশাখা চালু করা হবে।
জনতা ব্যাংক পিএলসির এমডি মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘অনেক উপজেলাতে আমাদের শাখা নেই। সে জায়গাগুলোতে আমরা চাচ্ছি আমাদের সেবা পৌঁছে যাক। এ বছরে ১০০টা উপশাখা খুলতে চাচ্ছি। যে সমস্ত গ্রোথ সেন্টার আছে সে সমস্ত গ্রোথ সেন্টারে আমাদের সেবাটা পৌঁছে দিতে চাচ্ছি।’
সংস্কারের অংশ হিসেবে নতুন উপশাখা খোলাকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলো যখন নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন তখন জনতা ব্যাংকের উপশাখা হতে পারে যুগান্তকারী উদ্যোগ।
অর্থনীতিবিদ হেলাল আহম্মেদ জনি বলেন, ‘উপশাখাগুলো যদি বেশি ওপেন করা হয় সেক্ষেত্রে সুবিধা হলো ব্যাংকগুলোর ফিক্সড কস্টগুলো কমে যাচ্ছে। আমার মনে হয় সেটা ব্যাংক প্রফিটিবিলিটির দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা সহায়তা করবে।’
সিএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বড় বড় ব্যাংকগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে সাব-ব্রাঞ্চগুলো মেইন ব্রাঞ্চ হয়ে ওঠবে। আমি মনে করি এজেন্ট ব্যাংকিং এর পরিবর্তে সাব-ব্রাঞ্চ আইডিয়াতেই যাওয়া উচিত।’
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের পরেই অবস্থান জনতা ব্যাংকের। সারাদেশে ব্যাংকটির শাখা রয়েছে ৯২৬ টি।