আসন্ন নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক বিভাজন!

জাতীয় সংসদ ভবন, নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
জাতীয় সংসদ ভবন, নির্বাচন কমিশনের বৈঠক | ছবি: এখন টিভি
1

স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার হলেও এখনও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ব্যবস্থা। এতে গণতন্ত্র নিয়ে মানুষের আস্থায় পড়েছে বড় ধরনের সংকটে। এর মাঝেই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নতুন করে আলোচনায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতি। এই পদ্ধতি কী? কেন এত বিতর্ক? এতে কী সুবিধা রয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে এ পদ্ধতি নিয়ে?

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ১২টি, যার বেশিরভাগই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিশেষ করে সবশেষ তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘রাতের ভোট’, পেশিশক্তির প্রদর্শন ও নির্বাচন কারচুপির মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়। তবে ভোটের হিসেবের বাইরেও, আলোচনা চলছে নির্বাচনী পদ্ধতিগত সংস্কার নিয়ে। আলোচনার কেন্দ্রে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা বা পিআর পদ্ধতি।

ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচন হবে পিআর পদ্ধতিতে। এতে জামায়াত, এনসিপিসহ অনেক দল একমত হলেও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। এ কারণে এখনও সংশয়, ঠিক কোন উপায়ে হবে উচ্চকক্ষের আসন বিন্যাস। এনসিপি মনে করছে, আগের মতো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে দলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ঠেকানোর পথে কার্যকর উপায় হতে পারে উচ্চকক্ষ। আর ভোটের অনুপাতে হলেই মিলবে প্রকৃত সুফল।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে তারা দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে নিজেদের পছন্দ মতো সংবিধানটা সংশোধন করে ফেলতে পারে। আওয়ামী লীগ কিন্তু ২০০৮ সালে ৪৮ দশমিক সাত শতাংশ ভোট পেয়ে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়। তারাও পরে নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করে ফেলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটাই তারা বাতিল করে দেয়।’

গনসংহতি ঐক্যের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মনে করছেন, বিষয়গুলো দলীয় এজেন্ডার বাইরে গিয়ে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দলীয় এজেন্ডা নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ যদি নির্বাচনে তাদের সমর্থন দেন তাহলে তারা তখন পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে পারবেন। এর বাইরে তো এটার মীমাংসার কোনো পথ নেই।’

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ভারসাম্য রাখতে মিশ্র পদ্ধতির কথা বলছেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ। জানান, সংসদের ২০০ আসনে আগের মতো ভোট এবং ১০০ আসন হতে পারে পিআর পদ্ধতি। এতে ভোটের অপচয় কমবে বলেও মত দেন তিনি। অন্যদিকে উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতি চাইছে ইসলামি আন্দোলন। দলটির মুখপাত্র জানান, এ পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বন্ধ হবে সংসদ সদস্যদের প্রভাব, কমবে দুর্নীতি।

ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘প্রতিটি আসনে ভোটাররা দুইটা ব্যালটে ভোট দেবে। একটা ব্যালটে হচ্ছে যেখানে যেখানে প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন সেখানে ওই প্রার্থীদের তারা সিল দেবেন। আর একটা হচ্ছে তারা একটা দলকে ভোট দেবেন। ছোট বড় সকল রাজনৈতিক দল তাদের ভোটার এবং জনগণের অংশগ্রহণের একটা সংসদ হওয়া সম্ভব যদি আমরা এই সিস্টেমে যাই।’

আরও পড়ুন:

বিগত সময়ে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের। তার মতে, উচ্চ ও নিম্ম উভয় কক্ষেই কেবল পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোটের সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব।

আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বলেন, ‘পিআর হচ্ছে মোট প্রতিনিধিত্বমূলক এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের যে নৈরাজ্য- টাকা দেয়া, মাস্তানি করা, এটা বন্ধ হবে। পিআর সিস্টেমে যে ৪৯ শতাংশ ভোট পাবেন তার ভোট কাউন্ট হবে, যে ৫১ পাবেন তার ভোট কাউন্ট হবে। সারাদেশের সকল ভোটারের ব্যাটলটটাই এখানে কনসিডার হচ্ছে।’

তবে শুরু থেকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে বিএনপি। পিআর অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে মারার মতো পদ্ধতি উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু জানান, এতে স্বৈরাচারের ফিরে আসার পথ সুগম হবে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ যখন ভোট দেয় তখন মার্কা দেখে আর মানুষ দেখে। যে এ মানুষটা আমার এলাকায় কতদিন থাকে, আমার এলাকায় মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক আছে এসব বিবেচনা করে ভোট দেয়। পিআর পদ্ধতি অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার ভোটে এ দেশের মানুষ আগ্রহী হবে না। যারা এটা করছে তারা না বুঝে করছে এবং তারা বুঝছে না, এটা করাতে স্বৈরাচারের ফেরত আসার পথ আরও সুগম হবে।’

পৃথিবীর প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগে প্রচলিত রয়েছে পিআর পদ্ধতি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে আবার এর বিরোধিতাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব দাবি আদৌ গুরুত্ব পাবে নাকি দলগুলো এখান থেকে সরে আসবে? সামনের দিনগুলোতে সেগুলো স্পষ্ট হবে।

এসএস