সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরু দেশের ফল খেজুর। ছোট-বড় সব গাছেই আজওয়া, সুক্কারি, আমবাগ ও বকরিসহ বাহারি রঙের খেজুরের কাঁদি।
ময়মনসিংহ ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের আব্দুল মোতালেব। ভাগ্য বদলে ১৯৯৭ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরব। সেখানে তিনবছর কাজ করেন খেজুর বাগানে। রপ্ত করেন বাগানের পরির্চযাসহ নানা কায়দা-কানুন। পরে বিভিন্ন জাতের ৩৫ কেজি খেজুর নিয়ে ফিরে আসেন দেশে। এরপর বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন বাগান। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে সৌদি খেজুর এবং আট বিঘায় দেশীয় ও সৌদি ক্রস জাতের খেজুর বাগান তার। ২৭৫টি চারা নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাগানে এখন গাছ রয়েছে তিন হাজারের বেশি। খেজুরের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করেন গাছের চারাও। খরচ বাদে বছরে তার আয় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
ভালুকা মোফাজ্জল-মিজান সৌদি খেজুর বাগান স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘১৪ বিঘা জমিতে খেজুরে বাগান করেছি। যদি খেজুরের বাগান করতে কেউ আগ্রহী হয় তাহলে চারা দিতে পারবো।’
ভালুকা মোফাজ্জল-মিজান সৌদি খেজুর বাগান স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘দেশি খেজুরে ৫-১০ কেজি রস হয়, সেখানে আমাদের খেজুর গাছ থেকে ১৫-২০ কেজি খেজুর রস হবে।’
সৌদি খেজুরের মতোই মোতালেবের বাগানের খেজুরের আকার ও স্বাদ। বাজারে চাহিদাও বেশ। তার দেখাদেখি অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন খেজুর বাগান।
দর্শনার্থীরা জানান, তারা বাংলাদেশে সৌদির খেজুর দেখে অবাক হয়েছেন। আশেপাশের অনেকেই খেজুরের বাগান দেখে নতুন করে বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, খেজুর চাষ নিয়ে কোনো প্রকল্প না থাকায় প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তার সুযোগ নেই। তবে বাগানিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়ার কথা জানান তিনি।
ময়মনসিংহ ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত খেজুরে রোগ-বালাই কম হয়। আর কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমাদের কর্মকর্তারা তাদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।’
সম্প্রতি খেজুর বাগান পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ। খেজুর চাষিদের প্রণোদনার বিষয়টি কেবিনেট মিটিংয়ে তুলে ধরবেন তিনি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, ‘সৌদি আরবের সমমানের খেজুর এটি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেবিনেট মিটিং এ আমরা এটি নিয়ে কথা বলবো।’
মোতালেবের বাগানে জাতভেদে প্রতিকেজি খেজুর বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বীজ থেকে পাওয়া চারা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার এবং কলমের চারা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।