কয়েক বছর আগে মাঠগুলির বেশিরভাগ জমিতে থাকতো আখের আবাদ। এখন অনেকটাই কম। আখ বিক্রিতে হয়রানি, বিক্রির টাকা সময়মত না পাওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় চাষিরা বিমুখ আখ চাষে।
এছাড়া, আখের চেয়ে অন্য ফসলে দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকের মনোযোগ অন্য আবাদে, আখ স্বল্পতায় চিনিকলগুলিতে লোকসান বাড়ে। এখন নতুন করে উদ্যোগ নিলেও আখ চাষে মিলছে না সুফল।
আখ চাষিরা জানান, এক বছরের আবাদের ফসল বিক্রি হতে সময় লাগে। এ কারণে তারা লাভ করতে পারেন না। অনেক সময় আখ মরেও যায়। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে লাভ হয় না আখ চাষে।
স্বল্প মেয়াদে আখের জাত উদ্ভাবনের দিকে তাকিয়ে ছিল কৃষক। তবে, এক্ষেত্রে তেমন সফলতা দেখাতে পারেনি আখ গবেষণা ইনস্টিটিউট। কর্মকর্তারা জানান, স্বল্পমেয়াদী আখ উদ্ভাবন করলেও তা চিনি উৎপাদনে ব্যবহার উপযুক্ত নয়।
বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদী বলতে আমাদের কাছে আছে বিএসআরআই আখ। সাধারণত ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এর থেকে উৎপাদন পাওয়া যায়। তবে এ আখ থেকে গুড় হয় না চিনিও হয় না।’
আরও পড়ুন:
চিনিকলে লোকসানের নানা কারণের মধ্যে রয়েছে আখের স্বল্পতা এবং প্রতিবছর বিপুল অংকের ঋণের সুদ পরিশোধ। আর এ থেকে বের হতে ঋণের সুদ থেকে অব্যাহতি, কৃষককে আখ বিক্রির টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার পরামর্শ চিনিকল কর্তৃপক্ষের।
চিনিতে স্বয়ংসম্পন্ন হতে হলে আখের পাশাপাশি চিনি উৎপাদনে নজর দিতে হবে আখ বিট চাষে। এছাড়া, পুরাতন যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করাসহ চিনিকলগুলোকে সারা বছরই উৎপাদনমুখী রাখার পরামর্শ কৃষি অর্থনীতিবিদদের।
জয়পুরহাট চিনিকল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা বলেন, ‘আখ চাষিদের আমাদের সরকার থেকে প্রণোদনা দেয়ার নিয়ম আছে তবে তাদের আরও উৎসাহ দেয়ার জন্য আখ ফসলকে কৃষি ফসল হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। এ ফসলের ঋণের সুদের মতো দিতে হবে।’
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আখের সঙ্গে সুগার বিট করতে হবে। আখের উন্নত জাত নিয়ে আসতে হবে। আরেকটি উদাহরণ দেয়া যায়, বাংলাদেশে একটি আখ থেকে যে পরিমাণ চিনি হয় জাপানে সেম আখ থেকে ডাবল পরিমাণে চিনি হয়। দেশের মেশিনগুলো আধুনিকায়ন করা দরকার।’
দেশে চিনির চাহিদা ২৪ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চিনি উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকলগুলির পুঞ্জিভূত ঋণের সুদ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।





