বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর এই স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।
গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেই মৃৎশিল্পও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে আশাবাদী কুমিল্লার মানুষ। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান রয়েছে।
শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল, এমনটাই মনে করেন বিদগ্ধজনেরা।
১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান। এরপর অনেকটাই অভিভাবক-হারা এসব কুটিরশিল্প পণ্য। ব্যবসায়ীরাই টিকিয়ে রেখেছেন এসব পণ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায়।
জানা যায়, গত বছরের ৩১ মার্চ খাদির জিআই স্বীকৃতির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। বুধবার ঢাকার ওই অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টার কাছে ২৪টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি সনদ তুলে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা খাদি ঘরের মালিক ও প্রবীণতম খাদি ব্যবসায়ী প্রদীপ রাহা কান্তি বলেন, ‘এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আশা করা যায় কঠিন সংগ্রামে টিকে থাকা কুমিল্লার খাদি বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাবে। রাষ্ট্র এই শিল্পের প্রসারে কাজ করবে। রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করবে।’
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘কুমিল্লার খাদির একটি রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একটি স্বদেশী পণ্য এই খাদি। যার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের জাতীয় চেতনায় এর অংশগ্রহণ আমাদের এখনও উদ্বুদ্ধ করে। এই স্বীকৃত কুমিল্লাবাসী হিসেবে তাই আমাদের আনন্দিত করে।’