২০০৯ সালের ২৫ মে। সাইক্লোন আইলার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পাশের পদ্মপুকুর। জলোচ্ছ্বাসে পুরনো বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তা, বাজার। প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ।
আইলার পরেও থেমে থাকেনি দুর্যোগ। একে একে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ফণী, আম্পান, ইয়াস। প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁধ, ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
১৫ বছর পর গাবুরাকে রক্ষা করতে শুরু হয়েছে এক হাজার বিশ কোটি টাকার টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এর আওতায় তৈরি হচ্ছে ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ৮ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৫টি স্লুইস গেট, ১১টি ইনলেট ও ৮টি খাল পুনঃখনন। নতুন বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তিতে স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আইলার সময় ভেঙে যাওয়া এ বাঁধ আবার নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা আগের চেয়ে কমেছে। রাস্তাঘাটও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে জানান তারা।
তবে বাঁধ নির্মাণের গতি নিয়ে রয়েছে স্থানীয়দের অসন্তোষ। তাদের অভিযোগ, ৪৭টি প্যাকেজের অনেকগুলো কাজই চলছে খুব ধীরগতিতে। প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য না থাকায় অনেকে অভিযোগ তুলছেন কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও।
তারা বলেন, ‘এক বছরে ১০ ভাগ কাজ ও শেষ করতে পারেনি। তাহলে বাকি ৯০ ভাগ কবে করবে? কাজের মেয়াদ শেষ, কিন্তু সরকার আবার সময় বাড়িয়েছে। কিন্তু কতদিন বাড়িয়েছে তা আমরা জানি না। সরকারি যে ম্যানুয়াল হিসাবে কাজ হওয়ার কথা ছিলো সেভাবে হচ্ছে না।’
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২৭ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ ১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পটির কাজ সন্তোষজনক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্জিত ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৪০ শতাংশ। আশা করছি ২০২৭ এর জুন নাগাদ আমরা প্রকল্পটি শেষ করতে পারবো।’
এই বাঁধ শুধু দুর্যোগ মোকাবিলায় নয়, বরং সুন্দরবনের সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশ এবং দ্বীপবাসীর কৃষি ও জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
উপকূল রক্ষায় এই বাঁধ শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এই অঞ্চলের মানুষের টিকে থাকার অবলম্বন। তাই বাঁধটি যথার্থ মান ঠিক রেখে সময়মত কাজ শেষ করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।