খুলনায় আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ: ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

নিরালা আবাসিক এলাকার ভেতরে হচ্ছে নতুন রাস্তার কাজ
নিরালা আবাসিক এলাকার ভেতরে হচ্ছে নতুন রাস্তার কাজ | ছবি: এখন টিভি
0

খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষকে। একদিকে অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কাজ অন্যদিকে ড্রেন পুনঃনির্মাণ প্রকল্প। এগুলোর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে ওয়াসার সুয়ারেজ প্রকল্প। অপরিকল্পিত ভাবে এসব কাজ করার কারণে নগরীর সবচেয়ে পুরোনো আবাসিক এলাকা এখন হুমকির মুখে।

খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকা। নগরীর সব থেকে পুরানো ও অভিজাত আবাসিক এলাকার রূপ এখন বদলে যাচ্ছে। চলছে সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ। তবে এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোই এখন দুর্ভোগের কারণ নিরালাবাসীর কাছে।

নিরালা আবাসিক এলাকায় সড়কের কাজ করছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কেডিএর নির্মাণাধীন নিরালা ১ নম্বর সড়কটি প্রায় ৩ ফুট উঁচু করা হচ্ছে। এতে আবাসিকের প্রতিটি বাড়ির নিচ তলা থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট উঁচু হচ্ছে সড়কটি। এদিকে আবার এর সঙ্গে সংযুক্ত কেসিসির ২০টি সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য সড়ক নির্মাণ হচ্ছে আগের মতো নিচু করেই।

বাসিন্দারা বলছেন, এমন অপরিকল্পিত কাজে বৃষ্টি হলেই প্রতিটি বাসাবাড়ির নিচতলা সহজেই তলিয়ে যেতে পারে পানিতে। এদিকে ড্রেন পুনঃনির্মানের কাজ করছে খুলনা সিটি করপোরেশন। সেখানেও একই অবস্থা। ওয়াসার ম্যানহোলগুলোও একেক সড়কে একক রকম। ১নং সড়কের মাঝে ওয়াসার ম্যানহোল তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান সড়ক থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে এই ম্যানহোলগুলো।

নিরালাবাসীরা বলেন, ‘বিশ্বরোডের পরে জিরো পয়েন্ট থেকে যে লাইনটা টানা হয়েছে তা আবাসিক এরিয়ার মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রতিটা বাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে যাবে। রাস্তার দু পাশের বাড়িগুলো একতলা পুরোটা ড্যামেজ হয়ে যাবে এবং গোডাউন হিসেবে পরিচিত হবে।’

নিরালা আবাসিক এলাকার ভেতরে ২৯টি বড় আর ১৯টি ছোট সড়ক রয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু সড়ক পুনঃনির্মাণ করেছে কেসিসি। এছাড়া কিছু সড়কের কাজ চলছে। তবে সব সড়কই আগের মাপে অথবা কিছুটা উঁচু হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো কোনোভাবেই কেডিএর সড়কের সমান হচ্ছে না। কেডিএর প্রধান সড়কের কাজ শেষ হলে সংযোগ সড়কগুলোতে ওঠানামা যেমন সমস্যা হবে, তেমনটি পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ হওয়ায় আবাসিক এলাকার রূপ হারাবে নিরালা। ৪ লেন দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণ শেষ হলে ওই সড়ক দিয়েই খুলনা-মোংলা মহাসড়কের যানবাহনগুলো শহরে প্রবেশ করবে। ব্যস্ত সড়কে সারাদিনই ভারী যানবাহন চলাচল করবে। সড়কের চাপ অনুযায়ী নিরালা মোড়টি সম্প্রসারণ এবং নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি না করলে ওই এলাকায় যানজট বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।

নিরালা আবাসিক এলাকা জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘এ রোডটা যাওয়ার কথা ছিল নিরালার বাইরে দিয়ে। কিন্তু এখন ভেতর দিয়ে নেয়াতে আমাদের দুর্ভোগের স্বীকার হতে হচ্ছে। ১ নম্বর রাস্তার পাশে এ রাস্তার হাইট যত হচ্ছে এমন হলে ১ নম্বর রাস্তার আশেপাশে যত বাড়িঘর আছে ব্যবহার অনুপযুক্ত হয়ে যাবে।’

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়কে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ লিংক রোড নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় খুলনায় নতুন তিনটি সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। প্রায় ৭১৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রথম সড়কটি নিরালা মোড় থেকে ১ নম্বর সড়ক হয়ে দিঘির পাশ দিয়ে সিটি বাইপাস সড়কে গিয়ে মিশবে।

প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া এবং চার লেন হবে। নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৪ সালের ২৯ মে সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। কাজ শেষ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে। এছাড়া রূপসা সেতু অ্যাপ্রোচ সড়কের অংশ থেকে সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নিরালা প্রধান সড়কের কাজ হবে। সড়কের দুই পাশে ড্রেন ও ফুটপাত থাকবে।

কেডিএ সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোর্তুজা আল মামুন বলেন, ‘খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে প্রকল্পটি পরিচালনা করছে এটা কিন্তু ২০১৮ সালে আমাদের যে মহাপরিকল্পনা বা ১৪ সালের যে মহাপরিকল্পনা পরবর্তীতে যা গ্যাজেট হয়েছে সেখানেই নিরালার ১ নম্বর গেট থেকে সিটি বাইপাস পর্যন্ত একটা লিঙ্ক রোড মহাপরিকল্পনার মধ্যে ছিল। সেটারই তিনটা রাস্তা নিয়ে একটা প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১৭৮ সালে সেটারই কাজ চলমান রয়েছে।’

ইএ