পাটুরিয়ায় ৫ ফেরিঘাটের দুটিই প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে

পাটুরিয়া ১ নং ফেরিঘাটে বালুর স্তূপ
পাটুরিয়া ১ নং ফেরিঘাটে বালুর স্তূপ | ছবি: এখন টিভি
0

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ৫টির মধ্যে ২টি ফেরিঘাটই প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। নদী বন্দরের জায়গা দখল করে চলছে জমজমাট বালু ব্যবসা। সড়কের পাশে বালু স্তূপ করে রাখায় ভোগান্তিতে পড়ছে চালক-যাত্রী ও স্থানীয়রা। প্রভাবশালীদের খুঁটির জোর এতটাই শক্ত যে, নৌ উপদেষ্টা ঘাট খালি করার নির্দেশ পরও দেদারছে চলছে বালু ব্যবসা।

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ফেরি পারাপারের সুবিধার্থে ২০০২ সালে আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় ফেরিঘাট স্থানান্তর করে সরকার। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৫টি ঘাট।

কিন্তু নির্মাণের বছরখানেক পরই এক ও দুই নম্বর ঘাট চলে যায় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ২৩ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ দু'টি ঘাটের জায়গা দখল করে চলছে জমজমাট বালুর ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী চক্রটিকে সহায়তা করেন বিআইডব্লিউটিএ ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

সড়কের পাশে বিশাল স্তূপ এবং দিনরাত তা পরিবহনের কারণে বালু ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের এলাকায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী, চালক ও স্থানীয়দের।

চালক ও স্থানীয়রা বলেন, ‘বালুতে আমাদের ঘরবাড়ি সব ভরে যায়। আমরা চাই এ বালুর ব্যবসা বন্ধ হোক। যাত্রীরা আসা যাওয়া করে, কিন্তু ধূলা বালির মধ্যে তাদের চলাচল খুব কষ্টকর হয়।’

ঘাট থেকে বালু ব্যবসা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। বাধ্য হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনায় জেলা প্রশাসক দেয়া হয়েছে চিঠি।

বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপ পরিচালক সেলিম শেখ বলেন, ‘মাইকিং করেছি যে আপনারা বন্ধ করেন নাহলে জব্দ করে নিলাম করা হবে। এবং ডিসি স্যারকে চিঠিও দিয়েছি যে একটা মোবাইল কোর্ট করে এটা বন্ধ করতে। আশা করছি যেকোনো মুহূর্তে মোবাইল কোর্ট হবে যেহেতু মাইকিং করা হয়েছে, চিঠি দেয়া হয়েছে।’

সম্প্রতি পাটুরিয়ায় পরিদর্শনে এসে ঘাট এলাকা দখলমুক্ত এবং ফেরি ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বালু ব্যবসা সরানোর নির্দেশ দেন নৌ উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। কিন্তু সে নির্দেশনার ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে, বালু ব্যবসায়ীদের দাবি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে চলছে তাদের ব্যবসা। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন বিআইডব্লিউটিএ চাইলে ভ্ৰাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

বালু ব্যবসায়ী কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ বলছে জায়গা তাদের, আর ব্যবসায়ীরা বলছে জায়গাটা তাদের। বিআইডব্লিউটিএ হাইকোর্টে রিট করে জমির অর্ডার তাদের পক্ষে আসছে। পরবর্তী অর্ডার আসার আগ পর্যন্ত এটা বলবত থাকবে৷ আর আমরা জমির মালিকদের থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করি।’

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘যে অভিযোগটি এসেছে অবৈধ বালুর ব্যবসার। সে জায়গাটি হলো বিআইডব্লিউটিএর ফোরসোভুক্ত এলাকা। বিআইডব্লিউটিএর জায়গায় মোবাইল কোর্ট করতে হলে তাদেরকেও সঙ্গে রাখতে হবে। তারা যদি সে মোবাইল কোর্টের আয়োজন করে আমরা তাদের সাথে থাকবো। এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।’

ঘাট এলাকার দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ বালু ব্যবসা উচ্ছেদ করবে এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী স্থানীয়দের।

ইএ