ভোলায় সরকারি চাল বিতরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

চাল বিতরণ কর্মসূচী
চাল বিতরণ কর্মসূচী | ছবি: এখন টিভি
0

ভোলায় সরকারি চাল নিয়ে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। বরাদ্দের অর্ধেক পরিমাণ চাল পাচ্ছেন না উপকারভোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, সহায়তার চাল যারা পাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ষাটোর্ধ জেলে মো. মালেক। এসেছেন বরাদ্দের ৮০ কেজি চাল নিতে। মাত্র ৩৫ কেজি চাল পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তিনি। জেলে মো. মালেক জানান, ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও চালের পরিমাণ ৩৫ কেজিও হবে না।

মালেক মাঝির মতো বেশিরভাগ জেলের একই অভিযোগ। বলেন রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার তারা।

জেলেরা বলেন, ‘যখন সাংবাদিক থাকে তখন চাল দেয় ৩৮ কেজি করে। আবার মাঝে মাঝে কমিয়ে দেয় ২৫ কেজি বা ২৬ কেজি করে। বালতি দিয়ে চাল দেয়ায় কম বেশি হয়। দড়ি পাল্লা দিয়ে দিলে সবার সমান চাল যেতো। অনেকে কার্ড ছাড়া চাল নিচ্ছে, আর আমরা কার্ড নিয়ে এসেও চাল পাচ্ছি না।’

সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য বা ট্যাগ অফিসার না থাকলেও চাল বিতরণ করছেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা। চাল বিতরণে সহায়তা করছেন বলে দাবি তাদের। তবে চাল দেয়ায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন দায়িত্বরতরা।

ভেদুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য চাল সারা দিনব্যাপী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। এবং ১৩০৪ কার্ডের চাল বিতরণ করা হচ্ছে।’

অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনারা থাকেন এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কিছু সমালোচক থাকে তারা এভাবে বলতে পারে। আমরা ৪০ কেজিই দিচ্ছি। এটা কমে ৩৯ কেজি হতে পারে কিন্তু এর কম আমরা দিচ্ছি না।’

এমন অবস্থায় অনিয়ম বন্ধসহ প্রকৃত জেলেদের ভিজিএফের চাল দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন জেলেরা।

শুধু জেলের ভিজিএফ নয়, গেলো ২৩ মার্চ মনপুরায় উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে দুস্থদের মধ্যে চাল দেয়ার সময় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হন। ৩১ মার্চ দৌলতখানের চর খলিফায় বিএনপি নেতার গুদাম থেকে সরকারি ১৮২ বস্তা, ভোলার বাংলাবাজার থেকে ১০০ বস্তা ও সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৫০ বস্তা চাল জব্দ করে এলাকাবাসী।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নজরুল হক অনু বলেন, ‘ওখানে যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী রয়েছে যেমন- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, জেলেদের চাল কিংবা ভিজিএফ চাল ইত্যাদি যে সাধারণ মানুষের সুযোগ সুবিধাগুলো আগে একটি দল নিয়ন্ত্রণ করতো। এখন কাগজে কলমে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবে প্রশাসন এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

তবে, বিএনপির নামে কিছু কুচক্রী মহল অপপ্রচার ছড়াচ্ছে বলে জানান, জেলা বিএনপির আহবায়ক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

ভোলা জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘ডিস্ট্রিবিউশন যেখানেই হোক না কেন সব জায়গায়ই কিছু দুষ্ট মুখের লোকজন থাকে বিরক্ত করার জন্য। ওই এলাকা আমার এখান থেকে অনেক দূরে। তবুও আমি লোক পাঠিয়েছি খবর নিয়ে আমাকে জানানোর জন্য।’

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের কাছে দলীয় লোকরা কেঊ যাবে না। যদি কেউ যায়, তাদের পদ থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে।

অন্যদিকে সরকারি সহায়তার চাল বিতরণে প্রভাব বিস্তার ও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা এ প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে চাল বিতরণ করছি। যদি এমন কোথাও দেখি চাল বিতরণের অনিয়ম হয়েছে তাহলে আমরা এর ব্যবস্থা নেব।’

দ্বীপ জেলা ভোলার দুই লাখ মানুষ মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় আয়ের পথ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এসময় নিবন্ধিত জেলেদের চালসহ নানা সহায়তা দেয় সরকার।

ইএ