সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির জব্দ করা ৯০ গরু নিখোঁজ; প্রশাসন-পুলিশ-বিজিবির মধ্যে দোষারোপ

বিজিবির জব্দ করা ভারতীয় গরু
বিজিবির জব্দ করা ভারতীয় গরু | ছবি: এখন টিভি
0

সুনামগঞ্জে সীমান্ত থেকে বিজিবির আটক করা ৯০টি ভারতীয় গরু জিম্মায় দেওয়ার পর থেকেই মিলছে না তার কোনো হদিস। বিজিবি বলছে, জেলা প্রশাসনের জিম্মায় গরু তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে জিম্মাদাররা এখন জানেন না, গরু কোথায়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্বে হারিয়ে গেল ৯০টি গরু।

এ যেন সিনেমার গল্প। কেউ ধরছে, কেউবা উধাও করছে ক্ষমতার প্রভাবে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে গত ৩০ এপ্রিল টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে ৯০টি ভারতীয় গরু আটক করে ২৮ বিজিবি। প্রকাশ্যে নিলামের প্রস্তুতিও নেয়া হয়। তবে নিলামের ঠিক আগ মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাতিল করা হয় প্রক্রিয়া। বিজিবি জানায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসা স্থানীয়দের কাছে জিম্মা দেয়া হয় জব্দ করা এসব গরু।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার ও ছাতক সীমান্তে বেড়েছে পশু চোরাচালান। রাতের আঁধারে মেঘালয়ের সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে আসছে গরু। উদ্ধার করা এসব গরু আনা হচ্ছিল সীমান্তবর্তী বোগলা বাজার থেকে, নৌকায় করে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে এসব গরু ভারতের মেঘালয় থেকে আনা। তবে নিলামের প্রস্তুতিতে বাঁধে বিপত্তি, কারণ অবৈধ এসব গরু বাজারের বৈধ ইজারা থাকায় আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে বিজিবি। পরে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাজার কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে নিয়ে যায় এসব গরু।

এদিকে, গত ৪ এপ্রিল দুই ব্যক্তি গরুর মালিকানা দাবি করে আদালতে আবেদন করলে, তদন্তে দেখা যায় জিম্মাদাররা গরু সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

জিম্মাদার বাহার উদ্দিন বলেন, ‘আমি যেখানে আছি সেখানে সব ঠিক আছে। এর বাইরে আমি আর কিছু জানি না গরু কোনটা কোথায় আছে।’

এদিকে নিখোঁজ এসব গরুর বাজার মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। অথচ এর দায় নিচ্ছে না কেউ। আদালতে মামলা চললেও প্রশ্ন রয়ে গেছে এ ৯০টি গরু গেল কোথায়?

বড়ছড়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘৯০টি গরু যখন সরকারি সম্পদ ধরা হলো, এগুলো একজনের জিম্মায় রাখলাম আর এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে এর দায় তো যে জিম্মায় রাখার আদেশ দিয়েছে তাকে নিতে হবে।’

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো সব চোরাকারবারি। বাইরে থেকে গরু আসে, এগুলো নিয়ে তারা হাট বাজার ডেকে নেয়। তারা বৈধ করার জন্য এগুলো করে।’

সুনামগঞ্জের ২৮ বিজিবি অধিনায়ক জাকারিয়া কাদির বলেন, ‘কার নির্দেশে এগুলো হচ্ছে এটা তো সবাই জানে। সবাই ছিলো ওখানে। জিম্মাকারী যারা ছিলো তারা এগুলো জিম্মায় নিয়ে হারিয়ে ফেললো এ দায় তো আমার না।’

এদিকে, তখনকার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত থাকা জেলা প্রশাসক রেজাউল করিমকে ভারতীয় গরুর জিম্মির বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে রেগে যান তিনি।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের জিম্মায় দিবে কেন? বিজিবি দিয়েছে কার জিম্মায় তা বিজিবি জানে। তারা আটক করেছে। এটা তো মামলা চলছে। মামলার রায় কি আসে সেটা আগে দেখেন।’

প্রতিনিয়ত ভারতীয় গরু সীমান্ত দিয়ে আসায় বেকায়দায় পড়েছেন জেলার দেশীয় গরুর খামারিরা। গরুর খামারিরা বলেন, ‘ভারতের গরু আনে কম টাকায়। আর আমরা দেশি গরু পেলে বড় করে সে টাকাটা পাই না। ভারতের গরু না আসলে দেশি গরু যে দামে বিক্রি হতো, এখন বিক্রি করতে হয় তার চেয়ে অনেক কম দামে।’

ইএ