ডাকাতের ভয়ে ৪৫ বছর ধরে জনশূন্য বগুড়ার পিচুলগাড়ি গ্রাম

পিচুলগাড়ি গ্রাম
পিচুলগাড়ি গ্রাম | ছবি: এখন টিভি
0

প্রায় ৪৫ বছর আগে ডাকাতের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার পিচুলগাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। বর্তমানে গ্রামটি পরিত্যক্ত থাকলেও বাপ-দাদার ভিটার টানে আবারও ফিরতে চান তারা। বাসযোগ্য করতে লোকালয়ের সঙ্গে সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের দাবি তাদের। এদিকে জনশূন্য এই গ্রামে গ্রামবাসী ফিরতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠের মাঝখানে জনমানবশূন্য এক গ্রাম—পিচুলগাড়ি। লোকালয় থেকে দূরে, তাই রাতের আঁধার নামতেই এ গ্রামে শুরু হতো ডাকাতের তাণ্ডব। প্রায় প্রতি রাতেই চালানো হতো হামলা, জ্বালিয়ে দেয়া হতো ঘরবাড়ি।

এমন ভয়াবহ অত্যাচার সহ্য করেও বাপ-দাদার ভিটা ছাড়েননি কেউই। কিন্তু এক রাতে ডাকাত দল হত্যা করে গ্রামের মোড়ল নান্নু হাজিকে। পরের দিন থেকেই বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যায় পিচুলগাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। ডাকাতের ভয়ে গ্রাম ছাড়ার প্রায় ৪৫ বছর কেটে গেছে। কিন্তু বিভীষিকাময় সেসব রাতের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে ওঠেন গ্রামবাসী।

গ্রামের একজন বৃদ্ধ বলেন, ‘সেসময়ে দিন দিয়ে যায় যে, ওই দিনে আমরা আসবো টাকা দেয়া লাগবে। টাকা না দিলে জমির দলিল দাও। সেই ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছি।’

অন্য একজন বলেন, ‘একেবারে অতিরিক্ত ডাকাত। কোনো বাড়িতে মিস যায় না, একে ধরে, ওকে মারে। প্রতিরাতেই ডাকাতের অত্যাচার ছিল।’

গ্রাম ছাড়ার পর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের কবর দেয়া হয়েছে পিচুলগাড়িতে। মৃত্যুর পরের ঠিকানা এখানে হলেও, যারা জীবিত রয়েছেন, তারা জীবদ্দশায় থাকতে চান পৈত্রিক বসতভিটায়। সম্প্রতি একজন সেখানে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেছেন। গ্রামবাসী বলছে, এখন আর ডাকাতের ভয় নেই তাই বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে ফিরতে চান তারা।

একজন বৃদ্ধ বলেন, ‘রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ যদি হয়, সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা আবার ওখানে ফিরে যেতে চাই।’

অন্য একজন বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি। যদি গ্রামে বিদ্যুৎ আসে তাহলে আমাদের গ্রামে যত মানুষ ছিল অধিকাংশই ওখানে আবার বাড়িঘর করবে।’

দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে পিচুলগাড়ি গ্রাম, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। জনশূন্য এই গ্রামে গ্রামবাসী ফিরতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাইফুর রহমানের।

তিনি বলেন, ‘যদি রাস্তার বিষয় থাকে, অথবা বিদ্যুতের বিষয়ে যদি তারা সঠিক পথে আগায় তাহলে আমাদের দিক থেকে সহযোগিতা থাকবে। তবে তাদের সেখানে বসবাস করতে হবে। তারপর তারা যদি আমাদের আবেদন দেয় তাহলে আমরা সরেজমিনে দেখে তাদের যতটুকু আইনিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে।’

ছোট হলেও গ্রামটি মোদের সকল গ্রামের সেরা। সোনা দিয়ে তৈরি এ গ্রাম মায়া-মমতায় ঘেরা। কবির লেখার মতোই সুন্দর এক গ্রাম পিচুলগাড়ি। একসময় ডাকাতের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও এখনো গ্রামবাসীর মায়া কাটেনি জনশূন্য এই গ্রাম ঘিরে। তাই বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গ্রামবাসীকে পুনর্বাসনের দাবি সবার।

এসএস