সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া দুটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঘরে দু'জন লোকের একজন দাঁড়িয়ে, একজন বসে আছেন মাটিতে। স্পিকারে গান বাজছে আর হাতে থাকা দেশিয় অস্ত্র ঘুরাচ্ছেন বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল আলম জিয়েস। নিজে মারধর করছে আবার ধরে আনা একজনকে দিয়ে আরেকজনকে মারধর করাচ্ছেন। হাতজোড় করে অনুনয়-বিনয় করেও নির্যাতন থেকে রেহাই মিলছে না। তার টিকটিক আইডিতেও রয়েছে অস্ত্রের মহড়ার অসংখ্য ভিডিও।
টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার দিনমজুর রাসেল ও জুয়েল জানান, ধরে নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মারধর করা হয় ৪০ হাজার টাকা চাঁদার জন্য। হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করলেও মারধর থেকে রেহাই দেয়নি। এখনো তাড়া করে ফিরছে সেই ভয়াবহ নির্যাতনের ট্রমা।
এদিকে স্থানীয় মাঝিয়ালি বাজারে মূর্তিমান আতঙ্ক ছাত্রদল নেতা হিজবুল আলম জিয়েস। বাজারের প্রতিটি দোকানেই চাঁদা দাবি করতো জিয়েস। চাঁদা না দিলে মারধর ও দোকান বন্ধ করে দেয়ার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
বন্ধ এক দোকান খুলে দিলে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদল নেতা মামুন সরকারকে রক্তাক্ত জখম করে জিয়েস। এছাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও ব্যবসা করে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। মানুষকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় ও মাদক ব্যবসার জন্য একটি গ্যাং রয়েছে ছাত্রদল নেতা জিয়েসের। স্থানীয়রা জানান, জিয়েসের নিজস্ব একটি গ্যাং রয়েছে। তিনটি টর্চার সেল রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
এদিকে তারাকান্দা থানার এসআই লিটন চন্দ্র পালের নেতৃত্বে সোমবার জিয়েসের ‘টর্চার সেলে' অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান মানুষকে মারধরের দেশিয় সরঞ্জাম ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় দুই সহযোগীসহ ছাত্রদল নেতা জিয়েসকে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, চাঁদা দাবি ও মারধরের মামলায় জিয়েসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও এবং টিকটকে অস্ত্রের মহড়ার ভিডিওর বিষয়ে তদন্ত চলছে। এবিষয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর জিয়েসকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে জেলা উত্তর ছাত্রদল। জেলা উত্তর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জিয়েস তারাকান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিশাদ আহমেদ সাদ্দামের অনুসারী।
জেলা উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সুজা উদ্দিন এখন টিভিকে জানান, বিষয়টি জানার পরই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সাংগঠনিক পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। জিয়েস যে কর্মকাণ্ড করেছে তা কখনোই কাম্য নয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে জঘন্য অপরাধে জড়িত ছাত্রদল নেতার এই শাস্তিকে লোক দেখানো পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরাই।