জল-জোছনার সৌন্দর্যে ঘেরা সুনামগঞ্জ। যেখানে ৬ মাস শুকনো ও ৬ মাস থাকে অথৈ জল। তবে প্রতিবছর সুনামগঞ্জবাসী বন্যা আতঙ্কে সময় পার করলেও বর্তমানে বন্যা প্রবণ জেলাটিতে বিরাজ করছে ভূমিকম্প আতঙ্ক।
আরও পড়ুন:
পৌর শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ডাউকি ফল্টের অবস্থান। সক্রিয় এই ফল্টলাইনের কারণে বিভিন্ন সময় কেঁপে উঠে সুনামগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চল। টেকটোনিক প্লেটে অবস্থান হওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। ফলে ভূমিকম্প বলয় হিসেবে ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
জেলার পৌর শহরের ডিএস রোড এলাকায় অবস্থিত পৌর বিপণি মার্কেট। যেখানে অর্ধশতাধিকের বেশি দোকান রয়েছে। এক দশক আগেই এই মার্কেটকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। তবে, তা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তিনতলার ওপরে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক নতুন স্থাপনা, ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঝুঁকি।
ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হাজারেরও বেশি বহুতল ভবন। বিল্ডিং কোড, সেটব্যাক কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তৈরি করা হয়েছে এসব ভবন। এতে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। পাশাপাশি পৌর শহরের ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডকে ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তবে, চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ ও সিলেট এলাকায় মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল সুনামগঞ্জের ছাতকে। সবশেষ ২১ নভেম্বর সারাদেশে পাঁচ মাত্রার বেশি ভূ-কম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ের জেলার মানুষ।
এক অধিবাসী জানান, প্রশাসনসহ সবাই যদি সচেতন না হন তাহলে ভূমিকম্পে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের ব্যাপবক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
এদিকে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবারও ভূমিকম্প হলে শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। প্রাণহানি ঘটতে পারে হাজারও মানুষের।
পরিবেশ বিশ্লেষক সালেহীন চৌধুরী বলেন, এ শহরে যদি পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবন ধসে যদি কোনো মৃত্যু হয় সেগুলো সরকারি ভবন হলেও তার দায় সরকারি দপ্তরসমূহের। আমি মনে করি ভূমিকম্প নিরোধক নয় এমন ভবন এ শহরে না থাকাই ভালো।’
পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের গাফিলতির কথা স্বীকার করে বলছে, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতির ক্ষেত্রে গাইডলাইন ফলো করতে পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন:
সুনামগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কয়েস আহমদ বলেন, ‘আমরা পুরো সার্ভে শেষ করতে পারিনি। শুধু ২ নম্বর ওয়ার্ডে কমপ্লিট করেছি। আমরা আশা করি সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুরো পৌর এলাকায় কতগুলো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তা খুজে বের করতে পারব।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘ভবিষ্যত প্রজন্ম ও আপনার বিনিয়োগ নিরাপদ করার জন্য ভূমিকম্প সহনীয় যে বিধান আছে তা মেনে সবাইকে দালান নির্মাণের অনুরোধ করছি।’
১৭৯৭ সালে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সুনামগঞ্জে অনন্ত ২৮৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন:





