আবারও দলীয় সন্ত্রাসী রাজত্বের শঙ্কায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা

ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথরখণ্ড দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যাকারীরা
ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথরখণ্ড দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যাকারীরা | ছবি: সংগৃহীত
0

পুরান ঢাকায় নির্মমভাবে ব্যবসায়ী হত্যার পর চাঁদাবাজি কিংবা আধিপত্য বিস্তারের ভয় থেকে এখনও বের হতে পারেনি এলাকাবাসী এবং সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এখনও ভয়ে আছেন তারা। তাদের শঙ্কা, এখন আপাতত চুপ থাকলেও বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা কমে এলেই আবার ফিরবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা আর দলীয় সন্ত্রাসের রাজত্ব। অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব দখলবাজের মূলোৎপাটনে সরকার কার্যত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরবে না।

পাষাণ পাথরেরও কি দুঃখ হয়? আধিপত্যের পৈশাচিকতায় উন্মত্ত বর্বর খুনির হাত ঘুরে ঘুরে যে থেঁতলে দিলো একটা জীবন্ত মানুষের খুলি!

শতাব্দীর নিষ্ঠুর এক ভিডিও চিত্র, ছুরি, রডের উপর্যপুরি আঘাত, তার ওপর প্রায় বিবস্ত্র একটা নিথর দেহ। উন্মাদের মতো সেই দেহের পাজরে, কোমরের ওপর পাথর ছুড়ে মারা হচ্ছে। শেষবারের মত এপাশ যখন ফিরছিলো, তখনও হয়তো মৃতপ্রায় ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংযোগ ছিলো পৃথিবীর। এর মধ্যে আবার পাথর ছুড়ে মারা হলো, মাথায়।

ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যস্ত এ এলাকার দোকানগুলো। মিটফোর্ডের ৩ নম্বর গেটের সামনের এ ব্যস্ত সড়ক। সড়কের ওপর ফলমূল বিক্রির হকার। সবার সামনে সেদিন ঘটেছে নির্মমভাবে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনা। কিন্তু ঘটনার চার দিন পর যখন আবার তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ঘটনা সম্পর্কে, তখনও তারা কথা বলতে দ্বিধান্বিত।

হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে মাত্র ২ থেকে ৫ হাত দূরের এই ফার্মেসিগুলোতে কাজ করা কর্মীদের এখনও এ নিয়ে কথা বলতে না চাওয়ার কারণও ভয়।

স্থানীয় দোকানদাররা বলেন, ‘লাশ দেখার কারণে ভয় লাগছে। আমরা সামনাসামনি দেখিনি। ভিডিওতেই দেখেছি।’

আবার অনেক দোকানদার জানাচ্ছেন, রাস্তায় মানুষের অনেক ভিড় ছিলো। ভিড়ের কারণে কিছু দেখা যায়নি। সবাই যার যার কাজে দোকানে ব্যস্ত ছিলেন তারা।

এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের পাশে রজনী বোস লেনের সোহানা মেটাল দোকান থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিহত ব্যবসায়ী সোহাগকে। এরপরের ঘটনা ঘটে মিটফোর্ড রোডের ৩ নম্বর গেট এলাকায়।

প্রতিদিন দেখা হওয়া এসব ব্যবসায়ীরাও ভয়ে। কেউ কেউ বলছেন, কোনও দিন কথা হয়নি। যদিও সিসিটিভিতে দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট, কখন, কীভাবে, কারা ঘটিয়েছে এই রোমহর্ষক ঘটনা।

ওই এলাকার একজন দোকানদার বলেন, ‘চাঁদাবাজ এখনো আছে। আমার কাছেও চেয়েছে বিগত ৩ থেকে ৪ মাস আগে যুবদল নেতার পরিচয়ে। আমি তাদের ভয় পাইনা তাই আমি বলতে পারছি। এরকম অনেকের কাছেই চেয়েছে, তারা হয়তো বলতে পারছে না।’

কিন্তু ঘটনার পর তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে। দল থেকে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি দিতে দেখা গেছে, এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে।

অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘ভয় সৃষ্টি করতে চায় কারণ ভয় সৃষ্টি করতে পারলে তাদের লাভ আছে। একটি হলো, রাজনৈতিক পদ পদবি থেকে শুরু করে সেই লাভটি সে পায়। কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে চাঁদাবাজি, মামলাবাজি বা দখল বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এই ভয় থেকে সে লাভবান হয়। গণঅভ্যুত্থানের পরে রাজনীতি কিংবা সমাজে কোন ধরনের ভয়, সংশয় বা দোদ্যলুমানতা থাকার কথা ছিলো না। কিন্তু নানাভাবে সেটা জড়িয়েছে।’

তবে এ হত্যাকাণ্ডে চাঁদাবাজি হয়েছে কি না এ নিয়েই বরং বক্তব্যে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তাদের। এমন অবস্থায়, আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও ভীতি ছড়ানোর এসব ঘটনার কতটা বিচার হবে এবং গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এসব সন্ত্রাসের কারণে জনসাধারণের মনে সঞ্চারিত ভীতি কতটা প্রশমিত হবে সে উত্তর যখন অনিশ্চিত, তখন পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেব অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসেই রাজধানীতে খুনের শিকার হয়েছেন অন্তত ১৩৬ জন।

ইএ