বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা তীররক্ষা বাঁধে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ভ্যানচালক শিপন প্রামাণিক। তার আয়েই চলে ৮ সদস্যের পরিবার।
শিপনের দৈনিক আয়ের ৪ থেকে ৫শ' টাকার অর্ধেকই ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের কেজি ৪০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা হওয়ায় বেড়েছে অভাব। এমন অবস্থায় পরিবারের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করাতো দূরের কথা, মাঝে মাঝে দিন পার করতে হয় খেয়ে না খেয়ে।
শিপন প্রামাণিক বলেন, ‘চালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি। এত টাকা দিয়ে চাল কিনে সংসার চলে না। রোজগার আগের মতোই আছে কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।’
স্থানীয়রা বলেন, ‘আমাদের রোজগার এখনো আগের মতো কিন্তু চালের দাম ৩৫ টাকা কেজি থেকে বেড়েছে ৬৫ টাকা কেজিতে।’
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। যা গেল মার্চে দাঁড়ায় ৪৯ টাকা ১১ পয়সায়। কৃষি বিভাগের বলছে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা বেড়েছে চালের দাম। এছাড়া ধান-চাল মজুদ করে ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণ করছে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. নাজমুল হক মন্ডল বলেন, ‘বিভিন্ন মৌসুমি ব্যবসায়ী আছেন যারা বিভিন্ন সময় ধান চাল কিনে রাখেন পরবর্তীতে বিক্রি করার জন্য। এ কৃত্রিম সংকটের জন্য চালের দাম বেড়ে যায়। আবার কৃষকদের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।’
প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে চালের দাম। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাড়েনি কৃষকের ভর্তুকি। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে চালের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বলে জানান কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির যুগ্ম পরিচালক ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘করপোরেট ব্যবসা যারা করছেন, তারা এ জায়গায় মুনাফা বেশি করছেন। আমরা সবাই জানি এ জায়গায় কারসাজি হচ্ছে। এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে কৃষকদের কাছ থেকে একটা পরশন সরাসরি কিনতে হবে। চাল সরাসরি মিলারদের থেকে কিনতে হবে। এখানে কোন মিডেল ম্যান রাখা যাবে না। এ জায়গা থেকে হয়তো কিছুটা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে আমাদের ন্যায্যমূল্য।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৭ লাখ টন। বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন।