আগামী ৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক। গত বছর বাংলাদেশের পণ্যে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ, এখন এর সঙ্গে যুক্ত হলো বাড়তি ২০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। যেখান থেকে ১২৭ কোটি ডলারের শুল্ক আদায় করেছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ সিস্টেমে ৩ ধরনের শুল্কহার আছে। স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে যেসব দেশের তাদের ক্ষেত্রে মোস্ট ফেডারড নেশন বা এমএফএন শুল্কহার প্রযোজ্য। যা ব্যবহার করা হয় বাংলাদেশি পণ্যের বেলায়।
২০২৪ সালে বাংলাদেশি পোশাক থেকে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ আদায় করেছে ওয়াশিংটন। পোশাক রপ্তানিতে গড় শুল্কহার ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নতুন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে এই হার বেড়ে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশে উন্নীত হবে।
তবে পণ্য ভেদে বাংলাদেশি পোশাকের শুল্কহারও ভিন্ন হবে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ম্যান মেইড ফাইবার দিয়ে তৈরি সোয়েটারে ধার্য করা শুল্ক ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫২ শতাংশ হবে। তুলার সুতা ও সুতি কাপড়ে বানানো পোশাকেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে শুল্কহার। জুতা রপ্তানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর যে অল্প সংখ্যক পণ্যে মাত্র ১ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে, সেগুলোর জন্য দিতে হবে ২১ শতাংশ শুল্ক। যদিও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় এই শুল্কহার তেমন উদ্বেগের নয় বলেই দাবি করছেন গার্মেন্টস মালিকরা।
গার্মেন্টস মালিকরা বলেন, ‘আপনি যদি পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন অনেক প্রতিবন্ধকতার পরেও আমরা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে আছি। বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে আগের চেয়ে ভালো।’
আরও পড়ুন:
তবে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চীন, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরার জন্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্থানীয় শ্রমিক ও কর্মীদের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা সঙ্কুচিত করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক জোটে দেখা যেতে পারে অসুস্থ প্রতিযোগিতাও।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত গড় শুল্কহার কী হবে সেটাই দেখার বিষয়। শুল্ক কমানো না হলে মেশিন টুলস ম্যানুফ্যাকচারিং, অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং পোশাক খাতে একটি বড় ধাক্কা লাগবে। যতদিন শুল্ক ইস্যুতে আমরা (দক্ষিণ আফ্রিকা) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে পারবো না, পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে থাকবে।’
নতুন শুল্কনীতির প্রভাবে বাণিজ্য অংশীদার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে আসবে নানা পালাবদল। ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলেও এখনও কোনো কোনো দেশের জন্য আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন ট্রাম্প। এক্ষেত্রে সমঝোতা না হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে অন্য দেশের বাজার ধরতে হবে কোনো কোনো রাষ্ট্রকে।