যশোরের অভয়নগর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের চিত্র এমন যেন এটি কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভবদহের সর্বগ্রাসী জলাবদ্ধতার কবলে এখন শতাধিক শিক্ষাঙ্গন।
অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটি উত্তরপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’তলা ভবনের সামনের খেলার মাঠে কোমর সমান পানি। যেন এটি কোনো মাঠ নয়, ছোটখাটো একটি পুকুর।
শ্রেণিকক্ষেও ঢুকেছে পানি। তাই স্কুলে আসতে অনীহা অনেক শিক্ষার্থীর। স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতি নিয়েই কোনোরকমে চলছে পাঠদান। শিক্ষকরা লড়ছেন অসম এক যুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের তিনটি ভবনের মধ্যে দু’টিতেই জল উঠে গেছে। এসব নোংরা পানিতে পা লেগে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও জানায় তারা।
বর্ষা এলে জলাবদ্ধতা যেন ভবদহ অঞ্চলের নিয়তি। পানিতে ডুবে থাকে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা। কোথাও আবার ক্লাস চলছে মন্দিরে, কোথাও উঁচু কোনো বাড়ির বারান্দায়। এতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক ভাবে।
আরও পড়ুন:
শিক্ষকরা জানান, রাস্তার পাশে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে জায়গার স্বল্পতা সত্ত্বেও অনেক কষ্ট করে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সাপ-পোকামাকড়ের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকরাও চিন্তায় থাকেন বলে জানান শিক্ষকরা।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, পাঠদান সচল রাখতে ক্লাস্টারভিত্তিক ক্লাস ও বিশেষ পরীক্ষার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘শিশুদের সমস্য হচ্ছে কোয়ালিটি এজুকেশনের ক্ষেত্রে। আমরা এর সমাধানের জন্য অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি সুফল পাবো। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।’
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বাড়ি ভিজিটে পরামর্শ দিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উঁচু জায়গায় অবস্থিত বিভিন্ন মন্দির বা উপাসনালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে।’
ভবদহ অঞ্চলের মানুষ বছরের চার মাসই কাটায় পানিতে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। এতো সমস্যায় শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে তাদের মধ্যে অনেকে।





