দাঁতের যত্ন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ সুস্থ দাঁত বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লসিং করা, এবং চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার মতো বিষয়ও রয়েছে।
দাঁতের প্রকারভেদ ও কার্যকারিতা
দাঁতের কয়েকটি প্রকার রয়েছে এবং এগুলোর কার্যক্রমও আলাদা।
কর্তন দাঁত: খাবার কাটার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ছেদন দাঁত: খাবারকে ছিঁড়ে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অগ্রপেষণ দাঁত ও পেষণ দাঁত: খাবারকে পিষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
আক্কেল দাঁত: সাধারণত পরিণত বয়সে ওঠে এবং এর কাজও খাদ্য পিষ্ট করা।
হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়
বিভিন্ন কারণে হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হতে পারে। এজন্য প্রথমে তাৎক্ষণিক আরামের জন্য নরম জল দিয়ে কুলকুচি করতে হবে। আক্রান্ত স্থানে বরফের প্যাক বা লবঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এগুলো সাময়িক উপশমের জন্য। বেশি সমস্যা হলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ঘরোয়া প্রতিকার
নুন জল দিয়ে কুলকুচি: এক গ্লাস হালকা গরম জলে ১ চা চামচ লবণ মিশিয়ে মুখ ধুলে প্রদাহ কমে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
বরফের প্যাক: দাঁতের ব্যথার জায়গায় একটি কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে লাগান। এটি সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
লবঙ্গ: লবঙ্গ দাঁতের ব্যথার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিকার। লবঙ্গ ব্যবহার করতে পারেন অথবা এর তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন।
জরুরি করণীয়
ডাক্তারের কাছে যাওয়া: দাঁত ব্যথার মূল কারণ জানতে এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত একজন দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলা: ব্যথা থাকা অবস্থায় মিষ্টি বা আঠালো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ছোট বাচ্চাদের দাঁতে ব্যথা হলে, প্রথমে লবণাক্ত উষ্ণ জল দিয়ে কুলকুচি করাতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা সেঁক দিতে হবে। যদি ব্যথা খুব বেশি হয়, তবে অবিলম্বে শিশুদের দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
লবণাক্ত জল দিয়ে কুলকুচি: এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে হালকাভাবে কুলি করাতে পারেন। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা সেঁক: একটি পরিষ্কার কাপড় বা তোয়ালেতে বরফ মুড়ে ব্যথার জায়গায় আলতো করে চেপে ধরুন। এতে ব্যথা ও ফোলা কমে যেতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া: যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কোনো ধরনের ফোলা বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশু-দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মুখের ভেতরের অবস্থা পরীক্ষা করে ডাক্তার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারবেন।
খাবার-দাবার: শিশুকে নরম খাবার দিন এবং চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে।
দাঁত ওঠা: যদি শিশুটির দাঁত উঠার সময় ব্যথা হয়, তাহলে তাকে চিবানোর জন্য নিরাপদ কিছু দিন। অনেক সময় দাঁত ওঠার কারণে এমনটা হয়।
দাঁতে ফিলিং করার ব্যথা
দাঁতে ফিলিং করার পর অনেক সময় ব্যথা হয়। রোগী ভেদে মাড়ি ফুলে যাওয়া কিংবা মাড়ি দিয়ে পুজ পড়ার ঘটনাও ঘটে। এগুলোর কিছু কারণও রয়েছে।
সাধারণত ইনফেক্টেড পাল্প (দাঁতের ভেতরে অবস্থিত রক্তনালী/শিরা-উপশিরা কে পাল্প বলে) এর ওপর সরাসরি ফিলিং দিলে মাড়ি ফুলে যায় আবার পাল্প না পচে থাকলেও সরাসরি পাল্পের উপর ফিলিং করলেও দাঁত ব্যথা হতে পারে।
সমাধান: প্রথমেই ফিলিং খুলে ফেলতে হবে। যদি পাল্প পুরোপুরি নষ্ট না হয়ে থাকে তবে পাল্পেক্টমি করে একটি পার্মানেন্ট ফিলিং করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যদি পাল্প নষ্ট হয়েই যায় ভয়ের কোন কারন নেই, রুট ক্যানেল করে একটি পার্মানেন্ট ফিলিং করে ক্যাপ করে নিলেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
রুট ক্যানেল করা দাঁতে ব্যথা
রুট ক্যানেল করা দাঁতে ব্যথা হলে এর কারণ হতে পারে স্বাভাবিক পোস্ট-অপারেটিভ অস্বস্তি অথবা সংক্রমণের মতো আরও গুরুতর সমস্যা।
চিকিৎসার পর প্রথম কয়েক দিন হালকা ব্যথা স্বাভাবিক এবং এটি ধীরে ধীরে কমে আসা উচিত। তবে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে, বেড়ে গেলে, বা ফোলা, দুর্গন্ধ, জ্বর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ এর কারণ হতে পারে ব্যর্থ রুট ক্যানেল, নতুন সংক্রমণ বা দাঁতে ফাটল।
প্রাথমিক ব্যথা
কারণ: রুট ক্যানেল একটি গভীর প্রক্রিয়া, তাই এটি নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত আশেপাশের স্নায়ু এবং মাড়িতে হালকা অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে।
করণীয়: সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে এই ব্যথা কমে যায়। এই সময়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম শরীরের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর ব্যথা
কারণ: রুট ক্যানেল পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়া, নতুন করে সংক্রমণ হওয়া, দাঁতে ফাটল ধরা
লক্ষণ: ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকা, মাড়ি বা গাল ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধ বের হওয়া, চিনি বা ঠান্ডা/গরম কিছুতে সংবেদনশীলতা, জ্বর।
দাঁতে ব্যথার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে, যা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। তবে ব্যথার কারণের ওপর নির্ভর করে ওষুধের ধরন ভিন্ন হতে পারে। গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী দাঁত ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সাধারণ ব্যথানাশক: ফার্মেসিতে সাধারণত পাওয়া যায় এমন কিছু ব্যথানাশক দাঁতের ব্যথার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে:
আইবুপ্রোফেন: এটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID)। আইবুপ্রোফেন ব্যথা ও ফোলা কমানোর জন্য কার্যকর। এটি অ্যাডভিল বা মোটিন নামেও পরিচিত।
প্যারাসিটামল: এটি হালকা থেকে মাঝারি দাঁত ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যারা NSAID ওষুধ নিতে পারেন না, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প।
নেপ্রোক্সেন: এটিও একটি এনএসএআইডি ওষুধ যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কেটোরোল্যাক: এটি তীব্র দাঁতের ব্যথার জন্য ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী এনএসএআইডি।
অ্যান্টিবায়োটিক
যদি দাঁত ব্যথার কারণ কোনো সংক্রমণ বা ফোলা হয়, তাহলে ডেন্টিস্ট অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে সংক্রমণের সমাধান করে। সাধারণত ব্যবহৃত কিছু অ্যান্টিবায়োটিক হলো: অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল ক্লিন্ডামাইসিন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়।
সাময়িক আরামের জন্য জেল ও মলম
দাঁতের মাড়িতে সরাসরি প্রয়োগের জন্য কিছু সাময়িক আরামদায়ক জেল বা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে বেনজোকেইন বা লিডোকেইন থাকে। এগুলি আক্রান্ত স্থানকে সাময়িকভাবে অসাড় করে ব্যথা কমায়।
ঘরোয়া প্রতিকার: ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যেতে পারে:
লবণ পানি: গরম লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের ভেতরের অংশ পরিষ্কার হয় এবং ফোলা কমে।
বরফ দেওয়া: আক্রান্ত স্থানে একটি ঠাণ্ডা প্যাক বা বরফ দিলে সাময়িকভাবে ব্যথা কমে।
লবঙ্গ তেল: একটি তুলার বল লবঙ্গ তেলে ভিজিয়ে আক্রান্ত দাঁতে লাগালে ব্যথা কিছুটা কমে।
পুদিনা চা: পুদিনা চা ব্যাগ ঠাণ্ডা করে আক্রান্ত দাঁতের উপর রাখলে তা স্নায়ু শান্ত করতে সাহায্য করে।
দাঁত ব্যথার কারণ: দাঁতে ব্যথার প্রধান কারণ হলো দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ, সংক্রমণ, এবং দাঁতের ফাটল বা ভাঙা। এছাড়াও, উন্মুক্ত দাঁতের শিকড়, সাইনাসের সংক্রমণ, বা গরম-ঠান্ডা খাবারে সংবেদনশীলতা থেকেও ব্যথা হতে পারে।
দাঁতে ব্যথার সাধারণ কারণসমূহ
দাঁতের ক্ষয় (ক্যাভিটি): ব্যাকটেরিয়ার কারণে দাঁতের ক্ষয় হলে ব্যথা হয়। দাঁত পরিষ্কার না রাখলে বা ক্যালসিয়ামের অভাব হলে এই সমস্যা বাড়ে।
মাড়ির রোগ: লালচে, ফোলা বা রক্তপাত হওয়া মাড়ি থেকে সংক্রমণ শুরু হয়ে দাঁতে ব্যথা হতে পারে।
দাঁতের সংক্রমণ বা পুঁজ: দাঁতের ভেতর বা মাড়িতে সংক্রমণ হলে ব্যথা হয় এবং পুঁজ জমতে পারে।
ফাটা বা ভাঙা দাঁত: শক্ত খাবার খাওয়া, দাঁত পিষানোর অভ্যাস, বা আঘাতের কারণে দাঁত ভেঙে বা ফেটে গেলে ব্যথা হয়।
উন্মুক্ত দাঁতের শিকড়: মাড়ি সরে যাওয়ার কারণে দাঁতের শিকড় বেরিয়ে এলে এটি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ব্যথা করে।
গরম, ঠান্ডা, টক বা মিষ্টি খাবারে সংবেদনশীলতা: দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত গরম, ঠান্ডা, টক বা মিষ্টি খাবারে সংবেদনশীল হয়ে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
সাইনাসের সংক্রমণ: কিছু ক্ষেত্রে সাইনাসের সংক্রমণের কারণেও দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কতদিন থাকে
আক্কেল দাঁতের ব্যথা সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যা দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া, আক্কেল দাঁতের সমস্যা বা দাঁত তোলার পর হতে পারে। যদি আক্কেল দাঁত মাড়িতে ঠিকমতো না ওঠে, তবে এটি ব্যথা, প্রদাহ এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আক্কেল দাঁত তোলার পর সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা থাকে।
দাঁত ব্যথার চিকিৎসায় ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে আছে নুন-জল দিয়ে কুলকুচি করা, লবঙ্গ তেল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা, ও রসুন-পেঁয়াজ খাওয়া। ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথানাশক ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিটামিনোফেন বা অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে দন্তচিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন, যেমন অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন।
ঘরোয়া পদ্ধতি
নুন-জল ব্যবহার: ঈষৎ উষ্ণ নুন-জল দিয়ে কুলকুচি করলে মাড়ির ব্যথা কমে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
লবঙ্গ তেল: একটি তুলোর বল লবঙ্গ তেলে ভিজিয়ে আক্রান্ত দাঁত ও মাড়ির ওপর লাগালে ব্যথা থেকে সাময়িক উপশম পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান মাড়ির সমস্যা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
রসুন ও পেঁয়াজ: রসুন ও পেঁয়াজের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমাতে এবং মাড়িকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
আদা: আদার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য মাড়ির স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ওষুধ ও চিকিৎসা
ব্যথানাশক ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শে আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল) বা অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ সেবন করলে ব্যথা কমতে পারে।
অসাড়কারী জেল: বেনজোকেনযুক্ত অসাড়কারী জেল দাঁত ও মাড়ির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।
অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াজনিত দাঁতের সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল বা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপ করা দাঁতে ব্যথা
ক্যাপ করা দাঁতে ব্যথা হলে এর কারণ হতে পারে ক্যাপের নিচে খাবার জমা, ক্যাপটি সঠিকভাবে না বসা, সংক্রমণ, বা রুট ক্যানেলের পরবর্তী প্রভাব। তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য গরম লবণ পানি দিয়ে কুলি করা এবং ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ব্যথা বেশি হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই একজন দন্তচিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ব্যথার কারণ
খাবার জমা: ক্যাপের ফাঁকে বা নিচে খাবার আটকে গেলে ব্যথা হতে পারে।
সঠিকভাবে স্থাপন না করা: যদি ক্যাপটি নতুন বসানো হয়, তবে এটি সঠিকভাবে সংযুক্ত না হওয়ার কারণে ব্যথা হতে পারে।
সংক্রমণ: ক্যাপের নিচে বা ক্যাপ করা দাঁতের টিস্যুতে সংক্রমণ হলে ব্যথা, শিরশিরানি বা কামড়ানোর সময় ব্যথা হতে পারে।
রুট ক্যানেল পরবর্তী: রুট ক্যানেল চিকিৎসার পর প্রথম কয়েকদিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত হালকা ব্যথা স্বাভাবিক, কারণ স্নায়ুগুলো নিরাময় হতে সময় নেয়।
দাঁত ফেটে যাওয়া: যদি ক্যাপের নিচের ভিত্তি বা দাঁত ফেটে যায়, তবে ক্যাপটি নড়বড়ে হয়ে ব্যথা হতে পারে।
ক্যাভিটির কারণে দাঁতে ব্যথা
পোকা বা ক্যাভিটির কারণে দাঁতের ব্যথা হলে সাময়িক উপশমের জন্য কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে মূল চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঔষধ (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী):
ব্যথানাশক: ব্যথা কমানোর জন্য আইবুপ্রোফেন (যেমন: অ্যাডভিল), প্যারাসিটামল (যেমন: টাইলেনল), বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। গুরুতর ব্যথার ক্ষেত্রে, ডাক্তার ইটোরাকক্সিব জাতীয় ঔষধ দিতে পারেন।
অ্যান্টিবায়োটিক: যদি দাঁতের গোড়ায় সংক্রমণ বা ফোড়া হয়, তবে ডাক্তার অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল বা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
ঘরোয়া পদ্ধতি
লবণ-গরম জল: এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে সাময়িকভাবে ব্যথা কমে।
লবঙ্গ তেল: লবঙ্গ তেল একটি তুলায় লাগিয়ে আক্রান্ত দাঁতে রাখলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে, কারণ লবঙ্গে অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে।
বরফ: গালের বাইরের দিকে একটি কাপড়ে মুড়ে বরফ ধরলে প্রদাহ কমে আসে।
রসুন: এক টুকরো রসুন থেঁতো করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
আক্কেল দাঁত ওঠার সময়
আক্কেল দাঁত সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে ওঠে, তবে এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। এই দাঁতগুলো সাধারণত একজন ব্যক্তির প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রথম দিকে বা কৈশোরের শেষের দিকে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, আক্কেল দাঁত একেবারে নাও উঠতে পারে।
সাধারণ বয়স: ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়স।
আক্কেল দাঁতের ব্যথার জন্য বেশ কিছু ঔষধ ও ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে, তবে কোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আক্কেল দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো:
ওভার-দ্য-কাউন্টার ঔষধ
আইবুপ্রোফেন: এটি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে খুবই কার্যকর, কারণ এটি একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি)।
প্যারাসিটামল: এটি একটি সাধারণ ব্যথা উপশমকারী ঔষধ যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।
ডাইক্লোফেনাক: এটিও একটি শক্তিশালী এনএসএআইডি, যা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ঘরেই প্রতিকার
লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি: এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে ব্যথা কমার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঠান্ডা সেঁক: একটি কাপড় বা তোয়ালেতে বরফ মুড়িয়ে ব্যথার স্থানে চেপে ধরলে ফোলা ও ব্যথা কমে।
লবঙ্গ তেল: লবঙ্গের তেল তুলার সাহায্যে ব্যথার স্থানে লাগালে তা সাময়িকভাবে অসাড় করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি ব্যথা তীব্র হয়, ঘরোয়া উপায়ে না কমে, বা গাল ফুলে যায়, তাহলে অবশ্যই একজন দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ব্যথার কারণ নির্ণয় করে এক্স-রে করে দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক বা দাঁত তোলার পরামর্শ দিতে পারেন।
আক্কেল দাঁতের ব্যথার জন্য বেশ কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যা বিভিন্ন লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। তবে মনে রাখা জরুরি যে কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। লক্ষণভেদে কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিচে উল্লেখ করা হলো:
সাধারণ হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার
আর্নিকা: আক্কেল দাঁত ওঠার সময় আঘাতজনিত ব্যথা বা মাড়িতে আঘাত লাগলে আর্নিকা কার্যকর হতে পারে। এটি ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
প্ল্যান্টাগো: দুর্বল দাঁত, মাড়ির ব্যথা এবং দাঁতের সংবেদনশীলতার জন্য এ ওষুধটি ব্যবহৃত হয়।
বেলেডোনা: আক্কেল দাঁতের ব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং তীব্র যন্ত্রণার সাথে মাড়ি লাল ও ফুলে গেলে বেলেডোনা ব্যবহার করা হয়।
ক্যামোমিলা: যদি ব্যথার কারণে প্রচণ্ড বিরক্তি, অস্থিরতা এবং অসহনীয়তা দেখা দেয়, তবে এটি ভালো কাজ করে। বিশেষ করে ঠান্ডা পানি মুখে রাখলে ব্যথা কমে আসে, এমন লক্ষণ থাকলে এটি কার্যকর।
কফিয়া: ঠান্ডা কিছু মুখে রাখলে ব্যথা কমে এবং গরম পানীয়তে ব্যথা বাড়ে, এমন ক্ষেত্রে এই ওষুধটি উপকারী। রাতে ব্যথা বেড়ে গেলে এটি ভালো কাজ দেয়।
সিলিকা: যদি দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমে এবং তা ব্যথা ও প্রদাহ সৃষ্টি করে, তবে সিলিকা ব্যবহার করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ লক্ষণভিত্তিক: আক্কেল দাঁতের ব্যথার কারণ ও লক্ষণের ওপর নির্ভর করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা হয়। তাই নিজে নিজে ওষুধ না কিনে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আক্কেল দাঁত ওঠার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো চোয়াল ও মুখে ব্যথা, দাঁতের চারপাশের মাড়ি ফুলে যাওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া, এবং মুখ খুলতে বা চিবোতে অসুবিধা হওয়া। অনেক সময় এর সাথে জ্বরও আসতে পারে, যা সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ:
ব্যথা: চোয়াল, কান ও মুখে ব্যথা হতে পারে, যা কখনও কখনও তীব্র হয়।
মাড়ি ফোলা ও লাল হওয়া: আক্কেল দাঁত বের হওয়ার সময় মাড়ির মাংসপেশিতে চাপ লাগে এবং মাড়ি ফুলে যায় ও লাল হয়ে যায়।
মুখ খুলতে বা চিবোতে অসুবিধা: প্রদাহের কারণে মুখ খুলতে বা খাবার চিবোতে সমস্যা হতে পারে।
সংক্রমণ: সংক্রমণের কারণে জ্বর, ক্লান্তি এবং ঘাড়ের লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।





