ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংয়ে এনপিএসবি ও বিইএফটিএন কী?

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং (প্রতীকী ছবি)
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং (প্রতীকী ছবি) | ছবি: সংগৃহীত
0

ব্যাংকিংয়ে ইলেকট্রনিক লেনদেন বলতে নগদ অর্থ ব্যবহার না করে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ আদান-প্রদানকে বোঝায়। এর মধ্যে এটিএম, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং (ইন্টারনেট ব্যাংকিং) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মতো বিভিন্ন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই দ্রুত এবং নিরাপদে লেনদেন করতে পারেন।

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) সুবিধা হলো দ্রুত লেনদেন, ২৪/৭ অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস এবং কম খরচে অর্থ স্থানান্তর। এর অসুবিধাগুলো হলো প্রযুক্তিগত সমস্যা, নিরাপত্তা ঝুঁকি (যেমন হ্যাকিং ও স্ক্যাম) এবং লেনদেন একবার সম্পন্ন হলে তা বাতিল করা কঠিন হওয়া।

সুবিধা

গতি: এটি মেইলের মাধ্যমে নগদ বা চেক পাঠানোর চেয়ে অনেক দ্রুত।

সহজলভ্যতা: এটি ২৪/৭ ব্যবহার করা যায়, তাই যেকোনো সময় অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করা এবং লেনদেন করা সম্ভব।

দক্ষতা: প্রথাগত কাগজের লেনদেনের তুলনায় এটি অনেক বেশি দক্ষ এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় কম লাগে।

খরচ কম: লেনদেনের খরচ সাধারণত কম হয়।

নমনীয়তা: ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল পেমেন্ট, এবং কার্ডের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করা যায়।

অসুবিধা

প্রযুক্তিগত ত্রুটি: প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে সেবা বন্ধ থাকতে পারে, যেমনটি বাংলাদেশেও দেখা গেছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি: হ্যাকিং, স্ক্যাম এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বাতিল করা কঠিন: একবার টাকা পাঠানো হয়ে গেলে, বিশেষ করে জালিয়াতির ক্ষেত্রে, সেই লেনদেনটি বাতিল করা বা ফেরত আনা কঠিন হতে পারে।

ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা: এ সেবার জন্য ইন্টারনেট বা প্রযুক্তির সংযোগ থাকা জরুরি।

এনপিএসবি এবং বিইএফটিএন উভয়ই বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি, তবে এদের মধ্যে চার্জের ভিন্নতা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনপিএসবিতে কোনো চার্জ লাগে না, যদিও কিছু ব্যাংক চার্জ নিতে পারে। অন্যদিকে, বিইএফটিএন চার্জবিহীন, তবে এতে সময় বেশি লাগে, যেখানে এনপিএসবিতে দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন হয়।

ইলেকট্রনিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম

এটিএম: স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা তোলা বা জমা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড: কেনাকাটা বা বিল পরিশোধের জন্য ইলেকট্রনিকভাবে অর্থ স্থানান্তরের সুবিধা দেয়।

মোবাইল ব্যাংকিং: স্মার্টফোনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা যায়, যা দ্রুত এবং সহজ।

অনলাইন বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং: একটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সব ধরনের ব্যাংকিং পরিষেবা পাওয়া যায়।

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি): কম্পিউটার-ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ স্থানান্তর করা হয়।

সুবিধা

দ্রুত ও সহজ: সনাতন পদ্ধতির চেয়ে অনেক দ্রুত লেনদেন করা যায়।

সুবিধা: গ্রাহকরা যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করতে পারেন।

নিরাপত্তা: গ্রাহকের হিসাবের গোপনীয়তা বজায় রেখে লেনদেন করা হয়।

বিস্তৃত সেবা: লেনদেনের পরিমাণ এবং ধরন আগের চেয়ে অনেক বেশি।

বিইএফটিএন ও এনপিএসবি কোনটি ব্যবহার করবেন |ছবি: সংগৃহীত

কীভাবে কাজ করে

যখন কেউ ইলেকট্রনিক লেনদেন করেন, যেমন ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করেন, তখন ব্যবহারকারীর কার্ডের তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে পাঠানো হয় এবং নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরাসরি বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়। এ পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়।

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে মধ্যে অন্যতম দুটি হলো এনপিএসবি ও বিইএফটিএন। প্রয়োজন ভেদে এ দুটি পদ্ধতি ব্যব্হার হয়ে থাকে।

ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ বা (এনপিএসবি) হলো বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবস্থা চালু করে। এটি বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্থিক লেনদেন সম্পাদনের জন্য আন্তঃসংযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। যা বিভিন্ন ধরনের লেনদেন (যেমন: এটিএম, পিওএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং) সম্ভব করে তোলে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পদ্ধতিতে লেনদেন হয়ে থাকে।

এনপিএসবির সুবিধা

এটিএম শেয়ারিং: এনপিএসবি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যে কেউ অন্য যেকোনো সদস্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে নিজের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবেন।

আন্তঃব্যাংক লেনদেন: এটি একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম যা বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে লেনদেনের সুবিধা দেয়।

বিভিন্ন ধরনের লেনদেন: এটিএম, পয়েন্ট অফ সেলস (পিওএস), এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার (আইবিএফটি)-এর মতো লেনদেনগুলো এনপিএসবি সিস্টেমের আওতায় সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে বিইএফটিএন হলো বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইলেকট্রনিক্যালি টাকা স্থানান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সহজেই টাকা পাঠানো যায়, যা বেতন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, কোম্পানির লভ্যাংশ এবং অন্যান্য ক্রেডিট ও ডেবিট লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি নিরাপদ, দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি যা ব্যাংকিং লেনদেনকে আরও সহজ করে তোলে।

বিইএফটিএনের সুবিধা

দ্রুত লেনদেন: দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে টাকা স্থানান্তর করা যায়।

সাশ্রয়ী: সময় ও খরচ বাঁচায়।

নিরাপদ: লেনদেন প্রক্রিয়া নিরাপদ।

বিভিন্ন ধরনের লেনদেন: বেতন, বিল পেমেন্ট (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস), লভ্যাংশ, বীমা প্রিমিয়াম ইত্যাদি লেনদেনের জন্য এটি ব্যবহার করা যায়।

করপোরেট সুবিধা: করপোরেট গ্রাহকরা ডেবিট লেনদেন (যেমন, ঋণ বা লোন পেমেন্ট) করতে পারেন।

অনলাইনে লেনদেন (প্রতীকী ছবি) |ছবি: সংগৃহীত

এনপিএসবি ও বিইএফটিএনের মধ্যে পার্থক্য

১। এনপিএসবি সিস্টেম ব্যবহার করে টাকা পাঠালে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে এটি সেকেন্ডের ভেতর পৌঁছে যায়। সে সেক্ষেত্রে স্ব স্ব ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট চার্জ নিয়ে থাকে। আবার অনেক ব্যাংক কোনো ধরনের চার্জ রাখে না।

অন্যদিকে বিইএফটিএনের মাধ্যমে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এ সময়টি সর্বোচ্চ তিন কর্মদিবস বা ৭২ ঘণ্টা লাগতে পারে। এতে কোনো ধরনের চার্জ প্রয়োজন হয় না।

২। এনপিএসবি ও বিইএফটিএন ছাড়াও আরেকটি পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে আরটিজিএস বা রিয়েল টাইম গ্রোস সিস্টেম । এ পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। তবে বিইএফটিএন এবং আরটিজিএস এর মধ্যে তুলনা করলে বিইএফটিএন অনেকাংশে অপারেট করা সহজ ও নিরাপদ।

এএইচ