২০৩২ সালে চাঁদে আঘাত হানতে পারে গ্রহাণু

প্রতীকী ফটো
প্রতীকী ফটো | ছবি: সংগৃহীত
0

২০৩২ সালে চাঁদে আঘাত হানতে পারে এমন এক গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছেন নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অ্যাস্টেরয়েড টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফোর ওয়াইআর ফোর নামে পরিচিত এই গ্রহাণুটি চিলির অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম অ্যাটলাসে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রথমবারের মতন দেখতে পাওয়া যায়।

সেসময় প্রায় ১৫ তলা ভবন সমান আকারের এই গ্রহাণুটি ২০২৫ সালের প্রারম্ভে পৃথিবীকে আঘাত করার ৩ শতাংশ সম্ভাবনা দেখিয়েছিল। তবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকের পর্যবেক্ষণ গ্রহাণুটির পৃথিবীতে কোনও আঘাতের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়। পরবর্তী গবেষণায় দেখা যায় যে গ্রহাণুটি চাঁদকে আঘাত করার জন্য যথেষ্ট কাছাকাছি আসার প্রায় ৪ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র ও প্রধান প্রাকৃতিক উপগ্রহ হওয়ায় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা মহাজাগতিক বস্তু হওয়ায় চাঁদে গ্রহাণু আঘাত করলে পৃথিবী কি ঝুঁকিমুক্ত থাকবে? যে কারোর মনেই এমন প্রশ্ন আসাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে নাসা।

নাসা বলছে গ্রহাণুটি যদি আসলেও চাঁদকে আঘাতও করে তাতেও পৃথিবী ও এর প্রাণিজগৎ এর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। চাঁদ বা গ্রহাণুর ছোট ছোট ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর দিকে ভেসে এলেও, এই আঘাত পৃথিবীর জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনবে না। নাসার গ্রহ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশকারী যেকোনো চন্দ্র ধ্বংসাবশেষ মাটিতে পৌঁছানোর অনেক আগেই পুড়ে যাবে। এছাড়া সর্বোচ্চ এটি একটি স্বল্পস্থায়ী উল্কাবৃষ্টির কারণ হতে পারে যা রাতের আকাশকে কয়েক ঘণ্টার জন্য আলোকিত করবে। বাস্তবে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবার পরিবর্তে নক্ষত্রদর্শকদের জন্য আদর্শ একটি দৃশ্য তৈরি করবে চাঁদ ও গ্রহাণুর এই সংঘর্ষ।

তবে নাসার জন্য এই ঘটনার সাইন্টিফিক ভ্যালু অনেক বেশি, কেননা এই ধরনের আঘাত বা সংঘর্ষগুলো রিয়েল টাইমে খুব কমই ধরা পড়ে। এছাড়াও পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান সংঘর্ষে ধ্বংসাবশেষ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং চাঁদের পৃষ্ঠ কীভাবে শক্তি শোষণ করে গবেষকদের তা অধ্যয়ন করার সুযোগ দেবে এই ঘটনাটি। মূলত এই ঘটনাটি কোটি কোটি বছর আগে সৌরজগতকে রূপদানকারী মহাজাগতিক ঘটনা সামনের সারির আসন থেকে দেখতে পারার মতোই।

আরও পড়ুন:

গ্রহ প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার জন্য অ্যাস্টেরয়েড টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফোর ওয়াইআর ফোর এরইমধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে। গ্রহাণুটির সংঘর্ষের সম্ভাবনা আবিষ্কারে করার পর নাসা তার প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅর্ডিনেশন অফিস ও ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক অ্যাস্টেরয়েড ওয়ার্নিং নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে। এর পাশাপাশি দ্রুত পর্যবেক্ষণ ও তথ্য বিশ্লেষণের জন্য বিশ্বব্যাপী একাধিক টেলিস্কোপ একত্রিত করে।

প্রজেক্ট ‘ডার্ট’ এর অধীনে নাসা র‌্যাপিড রেসপন্স ক্যাপাবিলিটি লাভ করেছে। ২০২২ সালে এই প্রজেক্টের অধীনেই নাসা একটি গ্রহাণুকে সফলভাবে তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে। অ্যাস্টেরয়েড টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফোর ওয়াইআর ফোর এর আবির্ভাব নাসার অ্যাস্টেরয়েড ডিফেন্স সিস্টেম কতোটা দ্রুত হুমকির প্রতি সাড়া দিয়ে মাসের পরিবর্তে সপ্তাহের ভেতর সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ গণনা করতে পারে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। নাসা জানিয়েছে যতবার একটি নতুন অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু রাডার অতিক্রম করে ততবার তথ্য আরও সুনির্দিষ্ট হয়, মডেলগুলি আরও নির্ভরযোগ্য হয় পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াও দ্রুত হয়।

সেজু