দুর্লভ খনিজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে চীন

বিরল খনিজ সম্পদ
বিরল খনিজ সম্পদ | ছবি: সংগৃহীত
0

বিশ্বজুড়ে দুর্লভ খনিজ উপাদানের রপ্তানি ও বাজারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে টেক্কা দিচ্ছে চীন। সিএনএনের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হচ্ছে, ঠিক এ কারণে চড়া শুল্কারোপের হুমকি দিয়েও বেইজিংকে চাপ রাখতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই, যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজের আমদানি সচল রাখতে কখনও গ্রিনল্যান্ড, আবার কখনও ইউক্রেনের ওপর ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে ওয়াশিংটন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে একাধিকবার গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত সুবৃহৎ দ্বীপের দুর্লভ খনিজের মালিকানা নিয়ে নেয়া।

রেয়ার আর্থ মিনারেল নিয়ে চুক্তি করেছেন ইউক্রেনের সঙ্গেও। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সংঘাতে মার্কিন অর্থ সহায়তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই কিয়েভের সঙ্গে এই চুক্তি সেরেছে ওয়াশিংটন।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দুর্লভ খনিজের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করছে সিএনএন।

গেল শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, সাময়িকভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তা গেল মাসে তা ভন্ডুল করে দিয়েছে বেইজিং। প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ওয়াশিংটন নিজেই উসকানি দিয়ে বাণিজ্য সংঘাত বাঁধানোর ছক কষছে।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গেল এপ্রিলে ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যে লাগামহীন আমদানি শুল্ক আরোপ করেন, এর প্রতিক্রিয়ায় রেয়ার আর্থ মিনারেলের বাজার একাই দখলের পাল্টা চাল দেয় বেইজিং।

দুর্লভ ৭টি খনিজ উপদান ও এর থেকে তৈরি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেয় নেয় শি জিনপিং প্রশাসন। যদিও ওয়াশিংটন ধারণা করছিল জেনেভায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সমঝোতার পর দুর্লভ খনিজ রপ্তানিনীতি কিছুটা শিথিল করবে চীন।

দুর্লভ খনিজ আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ভর করতে হয় চীনের ওপর। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থার জরিপে বলা হচ্ছে ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আমদানিকৃত দুর্লভ খনিজের ৭০ শতাংশই এসেছে বেইজিং থেকে।

শুধু তাই নয়, খনিতে পাওয়া যায় এমন দুর্লভ খনিজের ৬২ শতাংশের প্রোডাকশন চীনের দখলে। গোটা বিশ্বে যত খনিজ পাওয়া যায়, তার ৯২ শতাংশের প্রক্রিয়াজাত করণ হয় পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে।

স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইড দিয়ে তৈরি ১৭টি ধাতব উপাদানকে বিরল খনিজ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীতে মূলত দুই ধরনের খনিজ উপাদান মেলে। পরমাণুর ঘনত্ব ওজনের ভিত্তিতে একটিকে বলা হয় ভারি খনিজ অন্যটি হালকা খনিজ নামে পরিচিত।

ভারি খনিজ যেমন দুর্লভ তেমনি এর উত্তোলন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। যে সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায় যে দুর্লভ খনিজের খনি পাওয়া গেছে; সেখান থেকে মিনারেল আলাদা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ভর করতে হয় চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ জিইয়ে রাখলে দুর্লভ খনিজ আমদানির বিকল্প ভাবতে হবে ওয়াশিংটনকে। তাই, দুর্লভ খনিজের চালান সচল রাখতে চীন ছাড়াও ইউক্রেন, গ্রিনল্যান্ড ও সৌদি আরবের ওপর নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেজু