ইউরোপীয় পণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উরজুলা ফন ডার লাইয়েনের বৈঠক
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উরজুলা ফন ডার লাইয়েনের বৈঠক | ছবি: সংগৃহীত
0

অবশেষে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোয় ৩০ শতাংশ শুল্কের হুমকি কমিয়ে ইউরোপীয় পণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিশ্বের সব দেশের মতোই ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগের চেয়ে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বেশিতে জ্বালানি কিনতে ইউরোপের ২৭টি দেশকে বাধ্যও করেছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় এটিকে মুখ রক্ষাকারী আপসনামা হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাও করা হচ্ছে।

৩০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের বোঝা ঘাড়ে চেপে বসার ৪ দিন আগেই তা ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোববার (২৭ জুলাই) স্কটল্যান্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন। এ আওতায় ১৫ শাতাংশ ছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক, সেমিকন্ডাক্টর সরঞ্জাম ও কৃষি পণ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালসহ বেশ কয়েকটি কৌশলগত পণ্যে শূন্যের বিনিময়ে শূন্য শতাংশ শুল্কারোপে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ক্রয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়াতে এবং মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কিনতেও সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর বিশ্বব্যাপী সব দেশের জন্যই ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে বলে জানান ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি কিনতে সম্মত হয়েছে। তারা এরই মধ্যে যে বিনিয়োগ করছে তার চেয়ে এটি ৬০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে সম্মত হচ্ছে। তাই তারা বিনিয়োগ করছে।’

এ চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ’র বাণিজ্য অনিশ্চয়তার সময়ে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতার মাইলফলক বলে মনে করছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রাখবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইউপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, পেছনের দরজা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও অনেক বেশি রাশিয়ান এলএনজি আসছে, যা আমরা আর চাই না। আমরা রাশিয়ান জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পেতে চাই। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও সাশ্রয়ী মূল্যের এবং উন্নত এলএনজি কেনার চুক্তিটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখবরের।’

মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও। চুক্তিটি ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার একটি বড় পদক্ষেপ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর ফ্রান্স থেকে যাওয়া একটি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নোঙ্গর করেছে।

এদিকে শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন-ইইউ’র মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তিটিকে মুখ রক্ষাকারী আপসনামা হিসেবে দেখছন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এ চুক্তিটিতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম খাত অন্তর্ভুক্ত না থাকা নেতিবাচক প্রভাবের মুখোমুখি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি।

অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রজেস্কি বলেন, ‘সত্যি বলতে প্রায় সকল পণ্যের ওপর ১৫% কর উভয় পক্ষের জন্যই একটি মুখ রক্ষাকারী সমঝোতা বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব দেখতে পাব। চুক্তিতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং ওষুধ অন্তর্ভুক্ত না থাকা, এই খাত ও শিল্পগুলোর জন্য স্পষ্টতই নেতিবাচক খবর। কারণ এর অর্থ হল তারা উচ্চ শুল্ক, উচ্চ ব্যয় এবং স্পষ্টতই তাদের ব্যবসা আরও প্রতিকূল প্রভাবের মুখোমুখি হবে।

ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে সাজাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ইইউ ছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। 

যদিও তার ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি করার লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এখন ঘোষণা অনুযায়ী আগস্টের প্রথম দিন থেক বাকি দেশেরগুলোর উপর চাপিয়ে দেয়া শুল্কই কার্যকর হয় কি না তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব।

এসএইচ