৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে একমত চীন-যুক্তরাষ্ট্র

৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা বাড়াতে একমত চীন-যুক্তরাষ্ট্র
৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা বাড়াতে একমত চীন-যুক্তরাষ্ট্র | ছবি: সংগৃহীত
0

শুল্কচুক্তি না হলেও ৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন ট্রাম্প। শুল্ক ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে শেষ দফার বৈঠকে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই দেশ। এদিকে ভারতীয় পণ্যে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য এড়াতে এবং দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একটি টেকসই চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে, দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্কহার দাঁড়াতে পারে তিন অংকের ঘরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।

আরও পড়ুন:

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুই দিনের বাণিজ্য আলোচনা শেষ হয়। উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলেও, ৯০ দিনের শুল্কবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। আগামী ১২ আগস্ট শেষ হচ্ছে চীনের ওপর শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জানান, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বৈঠক শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছিল। দু’টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এটিই বড় খবর। তবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র।’

আলোচনাকে গঠনমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে দাবি করেছে চীন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল জানায়, চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে দুই দেশই গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়।

চীনের বাণিজ্য উপমন্ত্রী লি চেঙ্গান বলেন, ‘পারস্পরিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গভীর, স্পষ্ট এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষই একটি স্থিতিশীল ও সুদৃঢ় চীন-মার্কিন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে দুই পক্ষ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে চীন।’

আরও পড়ুন:

তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো এবং শুল্ক ধার্যের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চীন যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ না করে, তাহলে বেইজিংকে উচ্চ শুল্কের মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী।

তবে চীনের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বেশ আশাবাদী ট্রাম্প। বিস্তারিত কিছু না জানালেও, এ বিষয়ে বেশ ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ সময় ট্রাম্প বলেন, এই বছরের শেষ দিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন তিনি। তার সঙ্গে বৈঠকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ট্রাম্প।

এদিকে বহুদিন ধরে চলমান আলোচনায় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত না হলে, ভারতীয় পণ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, ভারত কিছু খাত উন্মুক্ত করতে ইচ্ছুক। এ বিষয়ে আলোচনার করতে আগ্রহী ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এসময় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ভারতের প্রশংসা করেন। তবে মার্কিন পণ্যে ভারতের উচ্চ শুল্কেরও সমালোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু। তবে তারা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় মার্কিন পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। এটি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তবে এবার আমি দায়িত্বে আছি। ভারত চাইলেই তা এখন করতে পারবে না।’

শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অংশীদার দেশকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত ভারতকে আলাদা করে চিঠি দেয়নি ওয়াশিংটন। গেলো ২ এপ্রিল ভারতীয় পণ্যে আরোপ করা হয় ২৬ শতাংশ শুল্ক। পরে ৯ জুলাই তা ৩ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

এসএইচ