যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য রুখতে চীন-রাশিয়া ‘একজোট’

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন | ছবি: সংগৃহীত
0

আধিপত্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতা রুখে দিতে একজোট হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কো সফরের প্রথম দিনে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব-বিষয়ক একটি চুক্তিও সই করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখন মস্কোতে মিলিত হলেন চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনা প্রেসিডেন্টের এই ৪ দিনের মস্কো সফরের কূটনৈতিক গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

বুধবার চীনা প্রেসিডেন্টকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বরণ করে নেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চা চক্রে মিলিত হন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। পুতিন ও শি এর নেতৃত্বে এরপর বৈঠকে মিলিত হন দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

চলমান অস্থিরতার মধ্যে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানান শি। রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি মন্তব্য করেন, অস্থিতিশীল বাণিজ্য ব্যবস্থা, সরবরাহ সংকট ও ওয়াশিংটনের শুল্কনীতির বিপরীতে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে বেইজিং ও মস্কো।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান অপরিসীম। বাণিজ্য ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতেও আমরা ভূমিকা রাখবো। আধুনিক সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ে তুলতে চীন অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চায়। চীন ও রাশিয়া উভয়ই বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘চীনা প্রেসিডেন্টের সাথে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে । বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ফলপ্রসূ এই বৈঠকের জন্য তাকে ধন্যবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যারা মস্কো সফরের এসেছেন, সকলকে কৃতজ্ঞতা।’

বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে আধিপত্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের একগুঁয়েমি ও বিশ্বকে শাসন করার ঔদ্ধত্য রুখে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনের এই স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দিতে বেইজিং-মস্কো একসাথে কাজ করবে এমন আভাসও দেয়া হয় বিবৃতিতে। এসময় ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনিশ্চিত অবস্থানের সমালোচনাও করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও বাণিজ্য যুদ্ধের বিপরীতে চীন-রাশিয়া জোট ভাবিয়ে তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনকে। এই দুই দেশই নিজেদের বিকল্প বিশ্বশক্তির আসনে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে, যা মার্কিন আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শি-পুতিনের বৈঠক যে নয়া মেরুকরণেরও ইঙ্গিত দেয় তা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে, নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাবেক সোভিয়েন ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মস্কোতে অবস্থান করছেন অন্তত ২০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। চীনা প্রেসিডেন্ট ছাড়াও রাশিয়া সফরে গেছেন ব্রাজিল, মিশরর স্লোভাকিয়ার সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান।

সেজু