থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত: উত্তেজনার দ্বিতীয় দিনে প্রাণহানি ১৬, শান্তির ডাক চীন-যুক্তরাষ্ট্রের

লঞ্চারের ওপর অবস্থান নেওয়া এক কম্বোডীয় সেনা
লঞ্চারের ওপর অবস্থান নেওয়া এক কম্বোডীয় সেনা | ছবি: রয়টার্স
0

দ্বিতীয় দিনে গড়ালো থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সামরিক সংঘাত। ইতোমধ্যে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। যার মধ্যে ১৫ জনই থাই নাগরিক। যদিও সার্বভৌমত্বকে সমর্পণ করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী। বিপরীতে কম্বোডিয়া সরকারের অভিযোগ, দেশটির ভূমি দখল করতে চায় থাইল্যান্ড। এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

আরএম-৭০ ও বিএম-২১ রকেট সিস্টেম দিয়ে এভাবেই থাইল্যান্ডে হামলা চালাচ্ছে কম্বোডিয়া। বিপরীতে নমপেনের আকাশে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারির মাধ্যমে গোলা ছুড়ছে ব্যাংকক। বিরোধপূর্ণ সীমান্ত নিয়ে দ্বিতীয় দিনে গড়ালো দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সংঘাত।

কম্বোডিয়া সামরিক বাহিনীর অস্ত্র গুদামে ড্রোন হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ড। বিপরীতে কম্বোডিয়া সেনাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু বেসামরিক স্থাপনা। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে থাই সরকার। স্থাপন করা হয়েছে ৩ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র। যদিও এতে ঠেকানো যায়নি প্রাণহানি। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে দিন পার করছেন বাসিন্দারা। সংঘাত নিরসনে দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

বাসিন্দারা বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণের শব্দ। কিছুক্ষণ বাদেই মাকে নিয়ে এখানে আসি। কেউই যুদ্ধ চায়নি। আমরা একতা চাই। কারণ আমরা কর্মজীবী মানুষ। যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইরত সেনাদের প্রতি সর্বোচ্চ সমর্থন রয়েছে।’

জাতির সার্বভৌমত্বকে সমর্পণ করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী। হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনায় না বসার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে কম্বোডিয়া সরকারের অভিযোগ, দেশটির ভূমি দখল করতে চায় থাইল্যান্ড। এ লক্ষ্যে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে থাই সেনারা।

কম্বোডিয়া সরকারের মুখপাত্র পেন বোনা বলেন, ‘আমাদের ভূমি দখল করতে চায় থাইল্যান্ড। তারা ৮টি অঞ্চলে যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সেনারা মাতৃভূমি রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছি।’

থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘যুদ্ধ নয়, এখন সংঘাত চলছে। আমরা এর নিরসন চাই। তবে তার আগে হামলা বন্ধ করতে হবে। আমরা সার্বভৌমত্ব সমর্পণ করবো না। জনগণের জানমালের দায়িত্ব সরকারের কাঁধে রয়েছে। আগ্রাসনকারীদের প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সংঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ প্রেস সচিব টমি পিগট বলেন, ‘থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘাতের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বেসামরিক জনগণের মৃত্যুতে ব্যথিত। অবিলম্বে শত্রুভাবাপন্ন কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শান্তিপূর্ণ সমাধান ও জনগণের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘আসিয়ানভুক্ত দুটি দেশই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বর্তমানে সীমান্তে যে সংঘাত চলছে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সংঘাত বন্ধে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। উত্তেজনা প্রশমনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার বিষয়ে বদ্ধপরিকর চীন সরকার।’

বৃহস্পতিবার সীমান্তের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে আহত হন ৫ থাই সেনা। এর পর সামরিক সংঘাতে জড়ায় দুই দেশ। এর আগে ২০০৮ ও ২০১১ সালেও ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল সীমান্তে একরকম সামরিক সংঘাতের দেখা মিলেছে।

ইএ