প্রেহ বিহার মন্দির: থাই-কম্বোডিয়ার ৯০০ বছর পুরোনো বিরোধ

৯শ’ বছর পুরানো মন্দির প্রেহ বিহার
৯শ’ বছর পুরানো মন্দির প্রেহ বিহার | ছবি: সংগৃহীত
0

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতের পেছনে লুকিয়ে আছে ৯০০ বছর পুরানো মন্দির প্রেহ বিহার। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মন্দিরটিকে কম্বোডিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি দিলেও তা মানতে নারাজ থাইল্যান্ড। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ কারণেই শত বছর পুরানো বিরোধ শিগগিরই শেষ হবার নয়। তবে জয়েন্ট বাউন্ডারি কমিশনের ৮০০ কিলোমিটার সীমানা পুনর্নিধারণের কাজ শুরুর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে পরিস্থিতি।

কম্বোডিয়ার ডাংরেক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত মন্দির প্রেহ বিহার। ৯শ’ বছর পুরানো এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলো খেমার রাজবংশ। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার তৎকালীন শাসক ফরাসিরা মানচিত্র আঁকার সময় মন্দিরটি কম্বোডিয়ার সীমানায় যুক্ত করেন। থাইল্যান্ড মানচিত্রটি প্রত্যাখ্যান করলেও ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় যায় কম্বোডিয়ার পক্ষে।

১৪ বছর পর আবারও বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ থাই সেনা আহত হবার পরই শুরু হয় সামরিক সংঘাত। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতের কারণ ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিরোধপূর্ণ স্থলসীমান্ত। যার মূলে রয়েছে ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহ্যবাহী স্থান প্রেহ বিহার মন্দির। ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরটির দখল নিতে মরিয়া থাইল্যান্ড। বিপরীতে এটি রক্ষার পাশাপাশি থাইল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত আরেক মন্দির তা মুয়েন থমের নিয়ন্ত্রণ চায় কম্বোডিয়া।

ব্যাংকক ও নমপনের জন্য মন্দির দুটি বিবেচিত হয় জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে। তাই বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সংঘাত দ্রুত শেষ হবার নয়। যদিও যৌথ সম্মতিতে তৈরি জয়েন্ট বাউন্ডারি কমিশনের সীমানা পুনর্নিধারণের কাজ চালু হলে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে পরিস্থিতি।

থামমাসাট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থানপাট চাটিনাক্রোব বলেন, ‘সংঘাত নিরসন চাইলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। ২০০০ এর দশকে সমঝোতা স্মারকের আওতায় জয়েন্ট বাউন্ডারি কমিশন তৈরি হয়। একে দুই দেশই সমর্থন দেয়। ফলে এটিই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো দ্বিপক্ষীয় চ্যানেল।’

প্রতিবেশী এই দুই দেশ আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সদস্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে জোটের পক্ষ থেকে অনেকটা দায় সাড়া অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, লড়াইরত দেশ দুটিকে আহ্বান জানানো ব্যতীত আলোচনার টেবিলে বসাতে বাধ্য করার এখতিয়ার নেই আসিয়ানের। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, আসিয়ান ছাড়া তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা বিবেচনা করবেনা তারা।

থাইল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরেন্দেজ বালাঙ্কুরা বলেন, ‘ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমাদের মনে হয় না, তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আসিয়ানকে ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’

থামমাসাট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থানপাট চাটিনাক্রোব বলেন, ‘সত্যি বলতে আসিয়ানের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। কারণ বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আসিয়ান কোনো দেশকে বাধ্য করতে পারে না। তবে তারা অন্তত দেশ দুটিকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানাতে পারে।’

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য বলছে, বিশ্বের ২৫তম সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র থাইল্যান্ড। কম্বোডিয়ার অবস্থান ৯৫তম। ব্যাংককের সেনা সংখ্যা নমপেনের তিন গুণ। তাই সংঘাত পূর্ণমাত্রার ছড়িয়ে পড়লে ফলাফল হেলে পড়তে পারে থাইল্যান্ডের দিকে।

ইএ